আজ জাতীয় চা দিবস। বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। চা উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বাংলাদেশের চা-শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। ১৮৩৯ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসাম ও সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে চা উৎপাদন শুরু করে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চা চাষ শুরু হয় ১৮৪০ সালে। বেশ কয়েক বছর গবেষণার পর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় চা এস্টেট থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ। চা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় একটি অর্থকরী ফসল। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় চা একটি অপার সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল। দেশে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তার ফলে নগরায়ণ ও জনতার শহরবিমুখতার কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকহারে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে চা-শিল্পের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। জিডিপিতে চা-শিল্পের অবদান শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ।
অপার সম্ভাবনাময় চা-শিল্পেরও কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়, যা দূরীভূত করা জরুরি। কেননা সমস্যা দূরীভূত করার মাধ্যমে এই শিল্পের অর্থনৈতিক দিককে আরও বেশি সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ দেয়া যায়। বর্তমান চা-শিল্পের কিছু বিষয় প্রতীয়মান হয়, সেগুলো হচ্ছে, চা চাষাধীন জমির মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ অতি ব্যবহƒত, যা অলাভজনক চা এলাকা। চা বাগানের মালিকানা নিয়ে বিরোধ। পরিবহন ও অন্যান্য সমস্যা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দিচ্ছে এই শিল্পকে। বর্তমানে স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ তিন হাজার ৭৪৭, অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজার ৪৩৭। মোট চা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা চার লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন।
জাতীয় চা দিবসে মূল প্রতিপাদ্য হোক চা শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন। জাতীয় অর্থনীতিতে শ্রমঘন চা-শিল্প খাতটি ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে, এমনটিই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের। এই আশার সুনির্দিষ্ট কারণ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের চাহিদা ও দাম দুই-ই ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভাবনাময় এই অর্থকরী ফসল চাষে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত হচ্ছে চায়ের আবাদ। এমনকি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়-টিলাভূমিতেও চায়ের সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। চা শিল্পোদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের বিবৃতি অনুযায়ী, নি¤েœাক্ত পদক্ষেপগুলো সুষ্ঠু ও যথার্থভাবে ত্বরান্বিত হলে চা-শিল্পের সম্ভাবনা ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করবে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ, নতুন নতুন চারা আবাদে সহায়ক এলাকা সম্প্রসারণ করা, পরিমিতহারে বৃষ্টিপাত, শ্রমিকদের সীমিত আকারে প্রণোদনার আওতাভুক্ত করা। চা-শিল্পের মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। কেননা চা-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের জীবনমান, তাদের সন্তানাদির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, পড়াশোনা তথা মৌলিক চাহিদা খুবই সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে। আমাদের চা উৎপাদন ও বিপণন-সংশ্লিষ্ট পাঁচ লাখ মানুষের জীবনমান অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে এই চা-শিল্পের উন্নয়নের ওপর।
সম্ভাবনাময় এই খাতটিকে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য, যার দরুন খুব তাড়াতাড়ি এই চা-শিল্প অর্থনৈতিক চমক দেখাতে সক্ষম হবে। সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সূদৃষ্টি কামনা করি।
জেএম রফিকুল সরকার
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়