Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:02 am

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে রোগীদের ভোগান্তি চরমে

নেহায়েত হাসান সবুজ, মানিকগঞ্জ: চিকিৎসক সংকটের কারণে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে চিকিৎসকের কক্ষ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ গ্রহণ করতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কেউ একদিনের সেবা দুই থেকে তিন দিনে, আবার কেউ সেবা নিতে এসে ফিরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে অনেকেই বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও আশরাফুল কবির জানান, প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন এই হাসপাতালে। লাইন ছোট করার লক্ষ্যে
পুরুষ-মহিলার পাশাপাশি বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, গর্ভবতী ও শিশু রোগীদের জন্য পৃথক ছয়টি লাইন করা হয়েছে। তারপরও ভিড় যেন বাড়ছেই। এর বড় কারণ জনবল সংকট, চিকিৎসক সংকট। ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, লম্বা লাইন তো হবেই। পুরোনো ভবনে দ্বিতীয় তলা নির্মিত হচ্ছে বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য, সেখানে চিকিৎসকদের চেম্বার হবে, কিন্তু চিকিৎসকই তো নেই, বসবে কে? বর্তমানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগীকে সেবা দিচ্ছেন ২০-২৫ চিকিৎসক, যা প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের দেড়গুণ কম।
সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট সংগ্রহ করেন। টিকিট পেলেও লাইন যেন পিছু ছাড়ছে না। চিকিৎসকের কক্ষের সামনেও থাকে সরু লাইন, সেখানেও চলে যায় আরও এক ঘন্টা। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কক্ষের লাইনগুলোও আরও অসহ্য ভোগান্তিতে ফেলে।
সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রাম থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আসা সুজন হোসেন নামে এক যুবক জানান, অসুস্থ বাবাকে ডাক্তার দেখাবেন বলে এক দিনের ছুটি নিয়েছেন অফিস থেকে। সকাল সোয়া ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে চিকিৎসকের চেম্বারে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তখন জানতে পারেন চিকিৎসক ভর্তি রোগী দেখতে রাউন্ডে গেছেন, সেখানেও আরও এক ঘণ্টা। এরপর রক্ত পরীক্ষার কক্ষে গিয়ে শোনেন বেলা ১১টার পর রক্ত নেওয়া হয় না। ব্লাড টেস্ট করালেও ফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক দিন। এরপর আল্ট্রা-সোনোগ্রাম করতে হলে নাকি খালি পেটে আসতে হবে। ফলে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে আগামীকালের আশায়। এ অবস্থায় অফিস থেকে দু-তিন দিন ছুটি না নিলে চিকিৎসাসেবা নেওয়া খুবই কষ্টকর। জেলার বৃহত্তর এই হাসপাতলটিতে সেবার মান ভালো বলেই মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসে।
সিঙ্গাইরের শিবপুর থেকে অসুস্থ শ্বশুরকে নিয়ে হাসপতালে সেবা নিতে আসা আজিজুল ইসলাম জানান, সিরিয়ালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ২০১ নম্বর কক্ষে চিকিৎসকের দেখা পেয়েছেন। এর পর এক্স-রে, ডায়াবেটিস ও রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। সেখানেও সিরিয়াল! ফল গ্রহণ করতে হবে। পরের দিন ফল জানার পর দ্রুত চিকিৎসা পেতে পাশের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হলো।
ঘিওর উপজেলার সিঞ্জুরী গ্রাম থেকে আসা ৫০ বছর বয়সী কমলা বেগম জানান, পায়ের ব্যথার চিকিৎসা নিতে এসেছেন সাড়ে ১২টায়, লাম্বা লাইনে সিরিয়াল না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই চলে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল আউয়াল জানান, এ হাসপাতালের সব সমস্যা সমাধান হবে জনবল সংকটের সমস্যা সমাধান হলে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। জনবল সংকটের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আর বহির্বিভাগের রোগীদের সেবা একটি প্রক্রিয়াধীন মাধ্যম, যখন তারা চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাল, তখন থেকেই তার সেবা শুরু হয়ে গেল। এরপর তো একটু সময় লাগবেই।