Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 2:20 pm

চিকিৎসক সংকটেও বাড়ছে রোগী

রফিক মজিদ, শেরপুর: দেশের মধ্য উত্তর সীমান্তের গারো পাহাড় বেষ্টিত জেলা শেরপুরে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ বাস করেন। কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ছাড়াও জেলায় নিয়মিত বাড়ছে স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যা। জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগী বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবসহ রয়েছে নানা সমস্যা। এসব সংকট কাঁধে নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

তবে হাসপাতালে শূন্যপদগুলো পূরণ করতে ও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মানুষের সেবা দিতে সদরে ২৫০ শয্যা চালু হলেও নিশ্চিত হয়নি ১০০ শয্যার মানও। এ হাসপাতালে ৩৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। নেই রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্ট। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, গাইনি, ইএনটিসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক না থাকায় রোগী এলে রেফার করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১৪ জন। ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১২ জন। নকলায় ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১১ জন। নালিতাবাড়ীতে ২২ জনের স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন ১৫ জন চিকিৎসক। এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালেই দায়িত্বরত অন্য পদেও রয়েছে তীব্র জনবল সংকট।

ডাক্তার দেখাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় টিকিট। চিকিৎসক পর্যন্ত যেতে প্রতি রোগীর সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। রোগীর ভিড়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান চিকিৎসক। এর ভেতর ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারণে রোগীরা হয়রানিতে পড়েন। এসব বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের খবর সংগ্রহে বাধা দেয়াও এখানে নিয়মিত ঘটনা।

শেরপুরের সব হাসপাতালে সাম্প্রতিক সময়ে নার্সদের দুর্ব্যবহারের চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওয়ার্ডবয় ও নার্সদের অসহযোগিতার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ অনেকে। হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়ও এখন এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এদিকে কভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে ভোগান্তি। কভিড রোগীদের জন্য ৫০ শয্যা বরাদ্দ থাকলেও পরিপূর্ণ সেবা না পাওয়ায় অনেকে থাকেন হোম আইসোলেশনে। পুরো জেলায় আইসিইউ নেই একটিও। রয়েছে নানা যন্ত্রপাতির অভাবও।

জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডের চার নম্বর কক্ষে চারটি ফ্যানের তিনটিই নষ্ট। এই গরমে ভর্তি রয়েছেন ছয়জন। সব উপজেলায়ও একই অবস্থা। চিকিৎসা নিতে আসা শিশু সুমাইয়ার বাবা সুলতান মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এই গরমের মধ্যেও ফ্যান চলে না। গরমে বেঁচে থাকাই দুষ্কর।’

নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কবির আহমেদ বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময়ই হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না। তারা এখানে ঢুঁ মেরে প্রাইভেট চেম্বারে চলে যান। গরিব রোগীরা নিয়মিত সেবা পায় না সরকারি হাসপাতাল থেকে।’

ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘ঝিনাইগাতীতে নার্সদের ব্যবহার দেখলে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে যায়। এদের আন্তরিকতার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। ডাক্তার তো নেই অনেকদিন হলো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য যাওয়া লাগে শেরপুর অথবা ময়মনসিংহে।’

শেরপুরের বিএমএ সভাপতি ডা. এমএ বারেক তোতা বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সংকট দূর করতে হবে। আমাদের সেবায় কোনো ঘাটতি নেই। আমরা যত জন ডাক্তার থাকা উচিত, রয়েছি এর অর্ধেক। দ্রুতই এই ঘাটতি আমরা কাটিয়ে উঠব।’

শেরপুরের সিভিল সার্জন একেএম আনোয়ারুর রউফ জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এরইমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসক সংকটের এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখন সব আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা জেলা সদর হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসা দিতে পারব।’