Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:57 am

চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিন

উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘হোয়াট হ্যাজ কভিড-১৯ টট আস অ্যাবাউট এশিয়া’স হেলথ ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত মানের নয়। প্রতিবেদনের সারবত্তা নিয়ে গতকাল প্রধান প্রতিবেদন করেছে শেয়ার বিজÑস্বাস্থ্য খাতের সব সূচকেই তলানিতে বাংলাদেশ। এডিবি বলছে, দেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য গড়ে একজন ডাক্তার। নার্স তার অর্ধেকেরও কম।  প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ল্যাব টেকনিশিয়ান গড়ে দুজনেরও কম এবং প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতাল শয্যার সংখ্যা গড়ে একটি।

এডিবির প্রতিবেদনটিতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৪টি দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো-সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি হাজার রোগীর জন্য গড়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাক্তার রয়েছেন জর্জিয়ায়; যার সংখ্যা পাঁচজন। এছাড়া গড়ে চারজনের বেশি ডাক্তার রয়েছেন আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া ও কাজাখস্তানে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। দেশটিতে প্রতি হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার রয়েছেন তিনজনের বেশি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানও রয়েছে বাংলাদেশের ওপরে।

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সরকারের এক ধরনের পরিতৃপ্তি আছে। যেমন ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা প্রধান দলটি ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে: কভিড অতিমারি প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য বিশ্বে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে; টিকা আবিষ্কারের পর থেকে ৩৭ কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে; ২০০৬ সালে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৩৫ হাজার ৫৭৯টি। বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে শয্যা ৭১ হাজার। ২০০৬ সালে ১টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, এখন আছে ৫টি।

অনেক কিছুই সংখ্যার মানে বিচার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যসেবার সুফল সাধারণ মানুষ কতটা পাচ্ছে; সেটিও বিবেচ্য হওয়া উচিত। আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় কতটা অব্যবস্থাপনা, লোপাট ও দুর্নীতি রয়েছে কভিককালে তা স্পষ্ট হয়েছে। আর এডিবির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তো প্রতিটি সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছে।

স্বাস্থ্য মানবসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আমাদের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে চিকিৎসাসেবা, জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন হলেও এখনও এ ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করতে পারে। বর্তমান সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠাকে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করলেও এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষ এর বাইরে রয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর পাশাপাশি সেগুলো থেকে মানসম্মত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারি হাসপাতালগুলো দেশের দরিদ্র মানুষের ভরসা। যে ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, তাদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেয়া সম্ভব নয়।

আমরা আশা করি, সরকারি হাসপাতালগুলোয় মানসম্মত সেবাদান নিশ্চিত করে জনসাধারণ, বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্যে চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।