মো. জিল্লুর রহমান: ১ সেপ্টেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস বা ওয়ার্ল্ড লেটার রাইটিং ডে হিসেবে স্বীকৃত। রিচার্ড সিম্পকিন নামের একজন অস্ট্রেলিয়ান ২০১৪ সালে বিশ্ব চিঠি লেখা দিবস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে সিম্পকিন যাদেরকে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি বলে মনে করতেন, তাদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। যখন এই কিংবদন্তিরা তাকে চিঠির মাধ্যমে উত্তর দেয়া শুরু করে তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। ২০০৫ সালে সিম্পকিন তার বই অস্ট্রেলিয়ান লেজেন্ডস প্রকাশ করেন। চিঠিগুলো নিয়ে তার উত্তেজনা ও আগ্রহের কারণে চিঠি লেখার জন্য উৎসর্গীকৃত একটি দিন তৈরি হয়েছিল। চিঠি লেখার প্রচারে সাহায্য করার জন্য তিনি বিভিন্ন স্কুলে চিঠি লেখার কর্মশালার আয়োজন করেন। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিতে এবং চিঠি লিখতে উৎসাহিত করেন।
প্রযুক্তির যুগে মমতা, ভালোবাসা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। একটা সময় চিঠিই ছিল দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রিয় মানুষের লেখা চিঠি মানুষ একবার পড়ত না, বারবার পড়ত। কখনো চুমু খেত। চিঠি হাতে পেলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত। দূর থেকে পাঠানো পিতার চিঠি ছেলে সন্তান, স্বামীর চিঠি স্ত্রী পেলে উৎফুল্ল হয়ে উঠত। চিঠির ভেতর খুঁজে পেত যেন সেই চিরচেনা মানুষের ছায়া, ভালো লাগা না লাগার অনুভূতি ও ছোঁয়া। চিঠি নিয়ে কবি, সাহিত্যিক লিখেছেন, কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক আরও কত-কী। কোনো কোনো চিঠি হয়ে গেছে ইতিহাস অথবা চিঠি লিখে কেউ হয়েছেন ইতিহাস। সময়ের বিবর্তনে আজ সেই চিঠি বিলুপ্ত প্রায়।
চিঠি বা পত্র হলো একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের জন্য লিখিত তথ্যধারক বার্তা। চিঠি দুজন বা দু’পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে; বন্ধু ও আত্মীয়দের আরও ঘনিষ্ঠ করে, পেশাদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করে এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়। স্বাক্ষরতা টিকিয়ে রাখতেও একসময় চিঠির অবদান ছিল। কাগজ আবিষ্কার করার আগ পর্যন্ত মানুষ গাছের পাতায় মনের ভাব লিখে প্রিয় মানুষের কাছে পাঠাত বলে তখন চিঠিকে বলা হতো পত্র। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চিঠি আদান প্রদান করেছে, ইলিয়াডে তার উল্লেখ ছিল। হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের রচনাবলিতেও তা উল্লেখ করা হয়েছে।
পৃথিবীতে কে কখন কাকে প্রথম চিঠি লিখেছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য আজও অজানা। তবে বহু বছর আগে মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ান অঞ্চলে মানুষ ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করত। যেমন আকাশের তারা দিয়ে বোঝানো হতো রাত, কিংবা তীর ও ধনুকের ছবি দিয়ে বোঝানো হতো যুদ্ধের বর্ণনাকে। ছবির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের এই মাধ্যমের নাম ছিল পিক্টোগ্রাম (ঢ়রপঃৎড়মৎধস)। এই পিক্টোগ্রামকে বলা হয় চিঠির বিবর্তিত রূপ।
সতেরো ও আঠারো শতকে চিঠি লেখা হতো স্ব-শিক্ষার জন্য। চিঠি ছিল পাঠচর্চা, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা, বিতর্কমূলক লেখা বা সমমনা অন্যদের সঙ্গে আইডিয়া বিনিময়ের পদ্ধতি। কিছু লোক চিঠিকে মনে করত কেবল লেখালেখি। আবার অন্যরা মনে করে যোগাযোগের মাধ্যম। বাইবেলের বেশ কয়েকটি পরিচ্ছেদ চিঠিতে লেখা। ব্যক্তিগত, কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিকÑ সবরকম চিঠিই পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকরা প্রাথমিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। কখনও বা চিঠি এতো শৈল্পিক রূপ ধারণ করেছিল যে তা সাহিত্যের একটি গর্ব হয়ে উঠেছিল, যেমন বাইজেন্টাইনে এপিস্টোলোগ্রাফি বা সাহিত্যের পত্র উপন্যাস।
পোস্ট অফিসের এসব চিঠিকে ঘিরেই এসেছে সভ্যতা। প্রথম স্ট্যাম্প করা চিঠি ১৮৪০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে শুরু হয়। মানুষের মনের ভাব আদান-প্রদানে চিঠি দীর্ঘকাল ধরেই রাজত্ব করেছে। এই মাধ্যম যত দিক দিয়ে সফল হয়েছিল, তা ভবিষ্যতে অন্য কোনো মাধ্যমের দ্বারা সফলতা পাবে কিনা সন্দেহ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের প্রতি এডওয়ার্ড টেলার এবং লিও শেলার্ডের লেখা বিখ্যাত আইনস্টাইনের চিঠি যেটাতে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রস্তাব ছিল। ঐতিহাসিকভাবে, চিঠির প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারত, প্রাচীন মিশর, সুমের, প্রাচীন রোম, মিশর এবং চীনে, চলছে এখনও কিন্তু অফিসিয়াল বা বাণিজ্যিক কর্মছাড়া কেউ পারত পক্ষে কোনো চিঠি লিখে না। তাও আবার ডাক মারফত যায় খুব কম, অধিকাংশই ইমেইল বা এ ধরনের ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
উপমহাদেশীয় প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সংবাদ আদান প্রদানের জন্য পাঠানো হতো কাসিদ বা ডাকবাহক। তবে দূরবর্তী অঞ্চলে খবর পাঠানোর জন্য ব্যবহƒত হতো পায়রা বা কবুতর। এজন্য পায়রাকে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। পায়রার পায়ে বেঁধে দেয়া ছোট সংবাদের চিরকুট, যা পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সম্রাট চেঙ্গিজ খাঁ তার অধিকৃত রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এই কবুতরের মাধ্যমে। তারপর যত দিন এগিয়েছে ডাক ব্যবস্থায় এসেছে নতুন সংযোজন। দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের শাসনকালে ডাক ব্যবস্থায় যুক্ত হয় ঘোড়ার গাড়ি। পর্যটক ইবন বতুতার বিবরণী থেকে জানা যায় সেই সময়ে দুইভাবে ডাক ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। এক পায়ে হেঁটে সাধারণ ডাক বিলিবণ্টন ও অন্যটি হলো জরুরি অবস্থায় যেমন কোনো বহিরাগতদের আক্রমণের সংবাদ অথবা যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের সংবাদ প্রেরণ করা হতো ঘোড়ার ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে। শেরশাহর শাসনকালে ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ঘটে। তিনি ডাক ব্যবস্থার সুবিধার্থে নির্মাণ করেছিলেন সোনারগাঁ থেকে সিন্ধু প্রদেশ পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তা।
কালের বিবর্তনে নিত্যই বদলাচ্ছে অনেক কিছু। পুরোনো রীতি, ব্যবস্থা, জীবনাচার অধিকার নিচ্ছে আধুনিকতার হাইটেক। এমন এক সময় ছিল যখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। সে যেন এক আদি রূপকথা। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ‘টরেটক্কা’ টেলিগ্রাম আর চিঠি। তারও আগে পায়রার পায়ে চিঠি বেঁধে খবর পাঠানো হতো। কাগজে লিখে খামে পুরে চিঠি পাঠানোর পর অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরাত না। চিঠি লেখার জন্য ছিল পোস্টকার্ড ও বিভিন্ন রং-বেরঙের প্যাড। তারপর ফেলা হতো ডাক বাক্সে। তারপর অপেক্ষার পালা।
এখন শহর কিংবা মফস্বলে ডাক বাক্সগুলোর কদাচিৎ দেখা মিলে। মফস্বলে বড় কোন বটগাছে সেঁটে থাকা কিংবা শহরে রাস্তার পাশে সটান দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ সমান লাল রঙের ডাকবাক্সগুলো কার্যত এখন অচল। সেই পোস্টম্যানও নেই, নেই চিঠিও। কেউ এখন চিঠি লিখে না। চিঠি লেখার অভ্যাসই মানুষ ভুলতে বসেছে। একটা সময় ডাক পিয়নের যথেষ্ট কদর ছিল। বিশেষ করে প্রেমের চিঠি বিলি করার ঘটনা এখনও অনেকের স্মৃতিতে অমলিন। চিঠির অপেক্ষায় বিরহ কাতর হতেন অনেকেÑ চিঠি কেন আসে না আর দেরি সয় না, ভুলেছো কি তুমি আমারে…। অনেক ডাকপিয়ন প্রণয়ঘটিত অনেক বিয়ের নীরব সাক্ষী। পিঠে চিঠির বস্তা নিয়ে ঝুনঝুন ঘণ্টা বাজিয়ে রাতের আঁধারে রানার ছুটত দূরের পথে। সেই চিত্র পাওয়া যায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতায়Ñ রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার চলেছে, রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার। সেই রানার সেই চিঠি, সেই ডাক বিভাগ সব এখন ডিজিটাল যুগের ধাক্কায় বিলুপ্তির পথে।
চিঠি নিয়ে সে সময়ের বহু স্মৃতির মতো এখনকার আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তেমন স্মৃতি স্মরণ রাখার মতো নেই বললেই চলে। চিঠিপত্র লেখাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল চিঠি লেখার পেশা। ডাকঘরের বারান্দায় লাইনের পর লাইন ধরেই সব শ্রেণির মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। ডাকটিকিট, পোস্টাল অর্ডার, ইনভেলাপ, রেজিস্ট্রি চিঠি, মানি অর্ডার, পোস্ট কার্ড, বিমা, পার্সেল, জিএমই, ভিপিপি, ইএমএস, স্মারক ডাকটিকিট, ডাক জীবন বিমা, লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকসহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন সবই হতো ডাকঘরে চিঠির মাধ্যমে। এমনকি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পও ডাকঘর থেকেই সংগ্রহ করতে হত। দূর-দূরান্তে মানুষ টাকা পয়সা মানি-অর্ডার করতো, যারা লেখাপড়া করতো তারা ডাক পিয়নের কাছে কয়েকবার খোঁজ নিত কখন টাকা আসবে। যারা চাকরিজীবী তারা বাড়িতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠালে তাদের পরিবার টাকার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত। এগুলোর চাহিদাতেই চিঠিপত্র ও মানি-অর্ডার আদান-প্রদানের মাধ্যমটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। এগুলো এখন শুধুই অতীত।
তখনকার যুগে যেসব মানুষ লেখাপড়া জানতেন না, ডাকঘরের লেখকেরা বারান্দাতে কিংবা সুবিধাজনক স্থানে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে তাদের চিঠিপত্র, মানিঅর্ডার কিংবা মালামাল প্রেরণ সংক্রান্ত কাজ করে দিতেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু করে দেড়শ’ বছর পর্যন্ত বজায় ছিল চিঠিপত্রের রমরমা অবস্থা। গাঁও-গেরামের বেশকিছু স্বল্পশিক্ষিত লোকজনরাই বিনে পয়সায় চিঠি লিখে দেয়ার কাজ করতেন। অবশ্য তাদের কদরই ছিল আলাদা। স্ব-হস্তের লেখা চিঠির মধ্যেই হƒদয়ের শত সহস্র কথা ও তার আবেগ, আকুলতা এবং ব্যাকুলতা সব বিষয় প্রকাশ পেত। মা-বাবা তার সন্তানের হাতের লেখা চিঠি যখন পেতেন, ঠিক তখনই কোমল হƒদয় দিয়ে পড়ে নিতেন। চিঠির মধ্যেই বাবা-মা নিজের সন্তানের মুখটাও দেখতে পেতেন। অবচেতনে চিঠি বুকে জড়িয়েও আদর করতেন।
অশিক্ষিত লোকজন শুধুমাত্র চিঠি পড়া ও লেখার জন্যেই যেন স্বাক্ষরতা অর্জনের চেষ্টা করেছিল। সেই সময়ে শিক্ষার বিস্তারে বিশাল অবদান রেখেছে ‘চিঠি’। আবার পারিবারিক চিঠিগুলো অনেক সময় খবরের কাগজের বিকল্প হিসাবেই যেন ব্যবহƒত হতো। চিঠিতে গ্রামের যে কোনো ঘটনা ও আশা-ভরসার খবর, আবাদের খবর বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরসহ বিভিন্ন খবর লেখা থাকত। আসলে হাতে লেখা চিঠি পরিবারের মধ্যে যেন নিবিড় সম্পর্ক ও ভালোবাসার গভীরতার সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতো।
বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে অনেক নিত্যনতুন সব প্রযুক্তি। দিয়েছে সবার পকেটে স্মার্ট মোবাইল ফোন। নিমিষেই প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে যায় হƒদয়ের কথা। আমাদের শ্রম বাঁচিয়েছে, খরচ বাঁচিয়েছে এবং বাঁচিয়েছে সময়। চিঠি বয়ে নিয়ে ডাকবক্সে ফেলতে হয় না। ভুল করলে বারবার কেটে দিতে হয় না। অনেক নতুনত্ব সংযুক্ত হয়েছে আমাদের জীবনে। ফেসবুক, টুইটার কিংবা মেইলে চিঠি বা তথ্যের আদান-প্রদান যত দ্রুত হোক না কেন কাগজে লেখা চিঠির সেই আবেগময়তা যেন আজও ভুলবার নয়।
অনেকই এখন মনে করেন কী দরকার বর্তমান প্রযুক্তি ছেড়ে অতীতের দিকে ঝুঁকে সময় ব্যয় করা, তাছাড়াও পত্রদাতাদের মন বুঝে আজকের পোস্ট অফিসগুলো চিঠিপত্রের বিলির কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। এখন ডাকঘরগুলোতে যা চিঠি আসে তার সিংহভাগটাই দাপ্তরিক, মানে চিঠি যা সেগুলো স্কুল-কলেজ বা অফিসের কোনো দরকারি চিঠি। তাই গ্রাম থেকে শহরের আজ যতগুলো ডাকঘর আছে সেখানে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান কাজটা ক্রমে গৌণ হয়ে আসছে। ডাকঘরগুলো বেশির ভাগ সময় ব্যবহƒত হচ্ছে মানুষের অর্থ সঞ্চয়ের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে। তাই বর্তমানে গ্রামীণ ডাকঘরগুলোকে ব্যাংকের ক্ষুদ্র সংস্করণ বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না।
প্রেম ভালোবাসার চিঠিগুলো ছিল একেকটি কালজয়ী বৃহৎ প্রেমের ইতিহাস। প্রচলিত চিঠির যুগে সব প্রেমিক-প্রেমিকারা হƒদয়ের আকুলতা-ব্যাকুলতা কিংবা প্রতিক্ষার প্রহরের খুঁটিনাটি সহজ সরল ভাষায় মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতেন। যা পড়ে পুলকিত হওয়ার পাশাপাশি তা সংগ্রহ করে রাখতেন প্রিয়জনেরা। চিঠিগুলোর ভাষা ও ভাবকে মনে হতো শত ফুল দিয়ে গাঁথা একটি গল্প বা উপন্যাস।
আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার ও অনুষঙ্গিক উপাদান হলো চিঠি। যা বাঙলির যাপিত জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাগজ আবিষ্কারের আগে মানুষ গাছের পাতায়, গাছের ছালে, চামড়ায়, ধাতব পাতে চিঠি লিখত। আর পাতায় বেশি লেখা হতো বলেই এর নাম হয় ‘পত্র’।
যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ ও একমাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ওয়ারলেস, টেলেক্স, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খবরা-খবর মুহূর্তের মধ্যে অপরের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে বিধায় ধীরে ধীরে হাতে লেখা চিঠি হারিয়ে যাচ্ছে।