চিনাদী বিল পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিনাদী বিলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলটি হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
চিনাদী বিলকে ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটানো গেলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে প্রশাসন স্থানটির নামকরণ করেছে ‘স্বপ্ন চিনাদী’।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবপুর উপজেলা থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে দুলালপুর ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি বিল চিনাদী। মানিকদী, শিমুলিয়া, দুলালপুর, ভিটি চিনাদী ও দরগাহবন্দ এ পাঁচ গ্রামের মিলনস্থলে বিলটির অবস্থান। এর রূপ মনোমুগ্ধকর।
বিলের পাড়ঘেঁষে কৃষকরা নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ করেছে। শুধু কি তাই? বিলে দেশীয় প্রজাতির প্রচুর সুস্বাদু মাছ রয়েছে। প্রায় ৫৫০ বিঘা আয়তনের স্বচ্ছ পানির এ বিলজুড়ে রয়েছে হাজারো মৎস্যজীবীর বিচরণ। চোখে পড়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন পাখির অবাধ বিচরণ।
শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বিলটি। জেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা কচুরিপানায় বসে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। দলবেঁধে এসব পাখির ওড়াউড়ি নিমিষে কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের মন।
শীতকালীন এসব পাখির সৌন্দর্য দেখার জন্য ভিড় করে স্থানীয়রাসহ দূর-দূরান্তের পর্যটকরা। বিলের চারপাশের শস্যশ্যামলা নয়নাভিরাম দৃশ্য ও নীল আকাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ে দর্শনার্থীদের। নৌকা কিংবা স্পিডবোটে বিলের বুকজুড়ে ভেসে বেড়ানো, অথবা বিলের তীরে হেঁটে মুগ্ধ হন তারা। সন্ধ্যা নামার আগে আকাশের রক্তিম আভা রাঙিয়ে তোলে চারপাশ। এখানে অনেক মানুষ জেলেদের কাছ থেকে দেশীয় মাছ কিনতে আসে। এই বিলের মাছের খ্যাতি রয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চিনাদী বিল প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে পর্যটকদের। তাই প্রতিদিনই সব বয়সি মানুষের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে। ঈদ কিংবা অন্যসব উৎসবে নামে মানুষের ঢল। শিবপুর উপজেলার কোথাও উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা মনে করেন, পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি চিনাদী বিলের তীরে মৎস্য ও কৃষিপণ্য আহরণ এবং বিপণনের ব্যবস্থা করা গেলে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। পাল্টে যাবে এলাকার চিত্রও। রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে এ বিলকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু নাঈম রিপন বলেন, জেলার একমাত্র বড় আয়তনের এ বিলটিতে সারা বছর পানি থাকে। দুই শতাধিক জেলে এ বিলের মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করে। বিলের সৌন্দর্য রক্ষা ও অতিথি পাখির যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বিলপাড়ের মানুষের।
শিবপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, বছরজুড়ে স্থানীয় ও দূরের দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে চিনাদী বিলপাড়ে। স্থানীয়ভাবে দর্শনীয় স্থান না থাকায় চিত্তবিনোদনে বিলই অনেকের একমাত্র ভরসা।
চিনাদী বিলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বিলটির নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নচিনাদী’। সেই স্বপ্ন পূরণে এখানে ঘাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কটেজ, শৌচাগার, রেস্তোরাঁ, কাঠের সেতু, ছাতা, ভ্রমণ নৌকা, ফিশ মার্কেটসহ প্র্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত এ বিলটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ কারণে রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

গাজী মাহমুদ, নরসিংদী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০