নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টিতে আখ মাড়াই বন্ধ থাকলেও কর্মীদের কাউকে ছাঁটাই করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য রোববার রাতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ৯টিতে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই না হলেও সেসব মিলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত এবং কৃষকের সরবরাহ করা আখ কেনা হবে। চিনিকলের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না, বরং সমন্বয় করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট চিনিকলগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৫টি চিনিকলের মধ্যে কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড, ফরিদপুর চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড, নাটোর সুগার মিলস লিমিটেড, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড, জয়পুরহাট চিনিকল ও জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেডে এ মৌসুমে আখ মাড়াই হবে।
আর কুষ্টিয়া চিনিকল, পাবনা চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড, রংপুর চিনিকল ও সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহ করা আখ কেনা হবে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা ওই সভায় অংশ নেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অধিক লোকবল, মেশিনের দক্ষতা নষ্ট হওয়া, কাঁচামালের ঘাটতি, দীর্ঘদিন জমতে থাকা ব্যাংকঋণের সুদ ও বছরের প্রায় ১০ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে প্রতি বছরই প্রায় হাজার কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকল। এসব কারণে বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত সাদা চিনি বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও সরকারি চিনিকলগুলোয় উৎপাদিত চিনির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
ঋণজালে জর্জরিত কারখানাগুলো সময়মতো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ করার সক্ষমতাও হারাতে বসেছে।
বিগত কয়েক বছরে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে মাড়াই মৌসুমের নানা সংকট উতরাতে পারলেও গত অর্থবছরে সেই ভর্তুকিও কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
বিএসএফআইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৭০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে চিনিকলগুলো। বিগত পাঁচ বছরে জমতে থাকা লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। এদিকে মৌসুমের মাঝখানে আকস্মিকভাবে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন আখচাষি ও চিনিকল শ্রমিকরা।
আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব চিনিকল চালুর ঘোষণা না দিলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন চিনিকল শ্রমিকদের সংগঠনের নেতারা। সে পর্যন্ত দাবি আদায়ে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালাচ্ছেন তারা।