নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে আরও দুটি বিষয়ে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে দেশটি। ভারত থেকে বাংলাদেশে চিনি ও মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ রফতানিতে এ সুবিধা চেয়েছে দেশটি। দুই দিনব্যাপী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ-সংক্রান্ত অনুরোধ জানায় ভারত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞাপ্তিতে জানা যায়, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। এতে ভারতের বাণিজ্যসচিব রীতা তিওতিয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এর বিপরীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সদস্যদের নিয়ে গঠিত ১৬ সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু।
সূত্রমতে, প্রতিবেশী ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে বাংলাদেশের বিপুল ঘাটতি রয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ২৫টি (মাদক, তামাক, মদজাতীয়) পণ্য ছাড়া সব পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা, অপ্রতুল অবকাঠামো এবং অশুল্ক বাধার কারণে বাণিজ্য-বৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর পর পর নিয়মিত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সভায় বিভিন্ন বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে একটি অংশিদারত্বের ভিত্তিতে সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতার (সিইপি) প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় চিনি রফতানিতে এবং মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পের জন্য যন্ত্রাংশের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি করে ভারত। অবশ্য এ দুটি খাতে ভারতকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্পঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। উল্লেখ্য, বর্তমানে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শক্ত অবস্থানের কারণে চিনি খাতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে মোটর পার্টস শিল্পেরও বিকাশ হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতীয় মোটর পার্টসের শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার আগে বাংলাদেশ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলেই অভিমত দেশি শিল্পমালিকদের।
এতে দুই দেশে সীমান্তে অবস্থিত স্থল শুল্ক বন্দরগুলো পণ্য খালাস দ্রুততর করা এবং ক্রমান্বয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সিইওজ ফোরাম গঠন, চারটি বর্ডার হাটের কার্যক্রমে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও ছয়টি বর্ডার হাট আগামী ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএসটিআই’র ২১টি খাদ্য পণ্যের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি দেওয়ার ধারাবাহিকতায় বাকি ছয়টি পণ্যের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি দিতে ভারতকে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে পাটজাত পণ্য এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার করার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বিষয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারতের সহায়তা প্রত্যাশা করা হয়। ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির সুবিধাও চেয়েছে বাংলাদেশ।