Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:56 pm

চিনে নিন কোনটা কোন বাতরোগ

গতকালের পর

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: প্রায় প্রতিটি বাড়ির বয়স্ক সদস্যের উঠতে-বসতে ব্যথা, নামাজ পড়তে ব্যথা এবং টয়লেট ব্যবহারে ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণত এর কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস। দেহের যেকোনো দুটি হাড়ের মাঝখানে তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ থাকে। বয়স বাড়ার পাশাপাশি এ তরুণাস্থির ক্ষয় হয়, পুনর্গঠনও আর আগের মতো হয় না। এই ক্ষয়ের কারণে ব্যথা, সন্ধি নড়াচড়া করতে সমস্যা, কিংবা কখনও ওই স্থান ফুলে যেতে পারে। সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, কোমর, কনুই, ঘাড় এবং বড় বড় সন্ধি আক্রান্ত হয় বেশি। স্থূলদেহী নারীদের ভোগান্তি হয় বেশি।

এসএলই বা লুপাস: এ রোগে পুরুষের তুলনায় নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার ৯ গুণ বেশি। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও গিরায় ব্যথা ও আড়ষ্টতার পাশাপাশি এই রোগে মুখে ঘা, ত্বকে দাগ, চুল পড়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, পা ফোলা, শরীরে পানি আসাসহ নানা সমস্যা হয়ে থাকে। নারীদের প্রজননক্ষম বয়সেই এই রোগ দেখা দেয় এবং প্রজননজনিত নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে লুপাসে জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারে।

গেঁটে বাত: গাউট বা গেঁটে বাতে ৪০-ঊর্ধ্ব পুরুষেরাই বেশি ভোগেন। গিরা বা অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিড জমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। যদি দেহে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি ও জমা হয়, কিংবা কিডনি ইউরিক অ্যাসিড বর্জ্য হিসেবে বের করে দিতে না পারে, তখন এ সমস্যা হতে পারে। গেঁটে বাত হলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ফুলে লাল হয়ে যায় এবং তীব্র ব্যথা হতে থাকে। চিকিৎসা নিলে সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সেরেও যায়।

এছাড়া আরও একশ’র মতো বাতরোগ আছে। প্রতিটি বাতরোগের আধুনিক চিকিৎসা আছে। অনেকে দোকান থেকে নিজে ব্যথানাশক, স্টেরয়েড প্রভৃতি ওষুধ কিনে ব্যথা দমিয়ে রাখেন, যা খুবই ক্ষতিকর। কিডনির অকার্যকারিতা, গ্যাস্ট্রিক আলসার ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে স্টেরয়েডজনিত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। অনেকে দোকান থেকে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, গ্লুকোস্যামাইনজাতীয় ওষুধের কৌটা কিনে দিনের পর দিন না বুঝে খেতে থাকেন। এতেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

বাতরোগের চিকিৎসা সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের পাশাপাশি রোগনিয়ন্ত্রক ওষুধের দরকার পড়ে। পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, ফিজিওথেরাপি প্রভৃতিও গুরুত্বপূর্ণ। (শেষ)

ডা. সাবরিনা ইয়াসমীন

বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল