রোহিঙ্গা সংকট

চীনকে নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বসছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা সংকটের সুরাহার লক্ষ্যে চীনের প্রতিনিধিসহ মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় এ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি এবং এ বিষয়ে মিয়ানমারের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে ত্রিদেশীয় এ বৈঠক হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের উদ্দেশে ছুটতে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। তাদের আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। সেখানে আগে আসা আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত দুই দফা প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও রোহিঙ্গাদের আপত্তির কারণে তা কার্যকর হয়নি। মিয়ানমারে এখনও তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি ভেস্তে দেওয়া রোহিঙ্গারা চারটি দাবি সামনে আনেন। সেগুলো হলো প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমিজমা ও ভিটামাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতায় থাকা চীন দূতাবাসের দুজন এবং মিয়ানমারের একজন প্রতিনিধিও ওইদিন টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
কূটনৈতিক তৎপরতায় ‘সন্তুষ্ট নয়’ কমিটি
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। তাদের মতে, যে নীতিতে এই সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতি রয়েছে। আরও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর জন্য বলেছে কমিটি।
এ প্রসঙ্গে ফারুক খান বলেন, কমিটি বলেছে, যেভাবে ডিপ্লোম্যাসি চালানো হচ্ছে, তাতে হবে না। শরণার্থী সমস্যা বহু দেশে রয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতেও অনেক তৎপরতা চালানো হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। এর জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের তাদের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করেছে। তারা জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদলতের (আইসিসি) মাধ্যমেও চেষ্টা করছে।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম নিয়ে আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সংসদীয় পর্যায়ে তৎপরতা চালাতে কয়েকটি দেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি। দুটি দলে ভাগ হয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সফর করবেন।
কমিটির সভাপতি ফারুক খান জানান, সংসদীয় কমিটির প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মতামত তৈরি এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে দেশগুলোর সংসদ ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবে।
বৈঠকে বিদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে, সেজন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়। অবৈধ মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক, কাজী নাবিল আহমেদ ও নিজাম উদ্দিন জলিল অংশ নেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০