শেয়ার বিজ ডেস্ক: সাতটি শিল্পোন্নত দেশের জোট জি৭। এই জোটের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা শিল্প খাতে চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খবর: কিয়োদো নিউজ ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং অন্যান্য পণ্য অন্যায্যভাবে কম দামে বিদেশে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত উৎপাদন করার অভিযোগ রয়েছে। গত শনিবার উত্তর ইতালির শহর স্ট্রেসায় দুই দিনের আলোচনা শেষ করার পর জি৭ কর্মকর্তারা একটি যৌথ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়Ñচীনের এরকম নীতি ও অনুশীলনের ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এতে আমাদের শ্রমিক, শিল্প ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা দুর্বল হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এক্ষেত্রে সব পক্ষের জন্য একটি অভিন্ন ক্ষেত্র নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া বিবেচনা করছেন।’
বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা রাশিয়ার সম্পদ থেকে উপার্জিত মুনাফা ব্যবহার করে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের ওপরও জোর দেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের কারণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এই সম্পদ জব্দ করা হয়।
কর্মকর্তারা আগামী মাসে জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের আগে নেতাদের কাছে এ-সংক্রান্ত বিকল্পগুলো উপস্থাপন করতে চান।
চীনের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো শিল্প উৎপাদন। গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে, যা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র লিউ আইহুয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মূল্য সংযোজন শিল্প গত মার্চের চেয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শিল্প উৎপাদন বেড়েছে তার আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যা জানুয়ারি থেকে মার্চের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এ শিল্প উৎপাদনের সূচক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বছরে কমপক্ষে দুই কোটি ইউয়ান আয় রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছে, সস্তা পণ্যের উদ্বৃত্ত হিসাবে যা অন্যত্র হওয়া উৎপাদনের জন্য হুমকি বলেই মনে করে তারা। গত মাসে চীন সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার ধারণা, চীন বুঝতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাদের শিল্প-কৌশলের প্রভাব নিয়ে আমরা কতটা উদ্বিগ্ন। কারণ এর ফলে আমেরিকার সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিযোগিতা করাটা আরও কঠিন হয়ে যায়। তার কথায়, এটা এক দিনে বা এক মাসে সমাধান করা যাবে না, তবে আমি মনে করি বিষয়টা তারা শুনেছে। এটা গুরুতর সমস্যা।
তবে চীন এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার যুক্তিগুলোকে অস্বীকার করে। তাদের সুরক্ষাবাদী নীতির জন্য এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘অজুহাত’ বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে চীনের পণ্য নিয়ে অভিযোগ বাড়ছে ইইউ দেশগুলোয়। এস দেশে একসময় চীনা পণ্যের পরিচিতি ছিল সস্তার ও অনুন্নত মানের। সেই দিন আর নেই। এখন চীনা পণ্য তৈরি হয় ‘গিগা ফ্যাক্টরি’র মতো বড় আকারে ও সমমানের। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্য আমদানির ওপর শুল্প বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের পণ্যের বিরুদ্ধে লাগাতার তদন্ত করে যাচ্ছে। মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যকার বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়েও সোচ্চা জি৭ জোট। এসব কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিবাদ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের গবেষক জিন রুইটিং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত পিপলনননস ডেইলিতে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা বলে কিছু নেই। এর সবই যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি। অন্য দেশগুলো যেন চীনের উৎপাদিত পণ্যের সুবিধা না পায়, সেজন্য এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে ওয়াশিংটন। তিনি বলেন, চীন উচ্চমানের ও সাশ্রয়ী পণ্য রপ্তানি করছে।