Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:09 pm

চীনের আর্থিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চীনের দেশজ জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি। এটি অর্থনীতিবিদদের ধারণার চেয়েও কম। দেশটির কর্মকর্তারা আর্থিক এ পুনরুদ্ধারকে ‘অস্থিতিশীল’ ও ‘অসম’ বলেছেন। খবর: বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান বু্যুরো (এনবিএস) ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি কভিড মহামারির ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি, বেশ কয়েকটি প্রদেশে কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং আবাসন খাতের শীর্ষ কোম্পানি এভারগ্রান্ডের ঋণ পরিশোধ ইস্যুতে তৃতীয় প্রান্তিকে ধারণার চেয়েও কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

এনবিএসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনে মাত্র ৪.৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের কভিডকালীন সময় থেকেও কম। যেখানে রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল এ প্রান্তিকে ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এর আগে দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রায় আট শতাংশ (৭.৯) এবং প্রথম প্রান্তিকে কভিডপরবর্তী দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ১৮.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

এ বিষয়ে এনবিএসের মুখপাত্র ফু লিংঘুই বলেছেন, আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে যে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং দেশজ আর্থিক পুনরুদ্ধার এখনও অস্থিতিশীল এবং অসম।

প্রবৃদ্ধি ধীরগতির পেছনে সম্প্রতি দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট, এভারগ্রান্ড, শিক্ষা খাতে বেসরকারি তথা বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ এবং গেম প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা।

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, প্রথমত বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে দেশব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ, যা কাঁচামালের ব্যয়ে প্রভাব ফেলেছে। কয়লা সংকট বেইজিংয়ে ২০৬০ সাল নাগাদ শূন্য কার্বন নির্গমন কর্মসূচিকেও ব্যাহত করতে পারে। দেশটির বেশ কয়েকটি প্রদেশের কারখানা, বাড়িঘর এমনকি রাস্তার বাতিও বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটির সাংহাই অঞ্চলের অন্তত ৩০ শতাংশ উৎপাদন কয়লার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া বন্যা এবং সরকারের কঠোর নীতির কারণে কয়লা উত্তোলন হ্রাস পায়। ফলে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে দেশটির শীর্ষ আবাসন কোম্পানি এভারগ্রান্ডের ৩০০ বিলিয়ন ঋণ পরিশোধ নিয়ে পুঁজিবাজারসহ সব আর্থিক খাতে আবাসন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি শিক্ষা খাতে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ শীর্ষ গেম নির্মাতা কোম্পানির ওপর চীনা কর্তৃপক্ষে কঠোর নীতির কারণে তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে।

এ বিষয়ে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়াবিষয়ক প্রধান লুই কুয়িজ এএফপিকে বলেন, এভারগ্রান্ডেসহ রিয়েল এস্টেটের মন্দার কারণে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ জলবায়ু এবং নিরাপত্তা লক্ষ্যমাত্রা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং উৎপাদন হ্রাসের কারণে সেপ্টেম্বরে ‘অতিরিক্ত আঘাত’ ছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিল্পোৎপাদনে ধীরগতির ফলে ক্ষতি দৃশ্যমান। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে নতুন নির্মাণ কার্যক্রম টানা ষষ্ঠ মাসে ধীরগতি ছিল। এনবিএস বলছে, এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি মাসিক ব্যয় ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন। এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সেপ্টেম্বর শেষে সার্বিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুট ছিল ৩.১ শতাংশ, যা কভিডের প্রথম ওয়েবের সময় ২০২০ সালের মার্চ থেকে সর্বনি¤œ শিল্পোৎপাদন প্রবৃদ্ধি।

এদিকে সেপ্টেম্বরে অ্যালমুনিয়ার সরবরাহ টানা পাঁচ মাসের ধারাবাহিত ঘাটতি ছিল। আর দৈনিক অপরিশোধিত ইস্পাতের প্রবৃদ্ধি ২০১৮ সাল থেকে সর্বনিম্ন। তবে নেতিবাচক প্রবণতা বজায় রেখে সেপ্টেম্বরে খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৪.৪ শতাংশ। আর বেকারত্বহার ৫.১ শতাংশ থেকে কমে ৪.৯ শতাংশে নেমেছে।

যদিও আগের দিন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (পিপল’স ব্যাংক অব চায়না) গভর্নর ইয়ি গ্যাংগ বলেছেন, চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ হবে।