শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী সিল্করোড প্রকল্পের আওতায় চীনের দেওয়া বড় অঙ্কের ঋণ শোধে ব্যর্থ হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। ঋণের ভারে নুইয়ে পড়া দেশগুলো এ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এতে থমকে যাচ্ছে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ বাণিজ্যিক পরিকাঠামো প্রকল্প। তবে এ ব্যাপারে চীন বলছে, দল গঠনের জন্য নয়, বরং পুরোপুরি মুক্ত এ প্রকল্প। খবর এএফপি।
২০১৩ সাল থেকেই চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প নিয়ে এগোতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে নীতিগত সংযোগের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ৬০টি দেশকে যুক্ত করা। নিজ দেশের চারপাশ ঘিরে স্থল ও জলে নতুন এক সার্বভৌম বাণিজ্যপথ খুলতে সচেষ্ট তারা। ইতিহাসের প্রচ্ছদ দিয়ে একেই বলা হচ্ছে ‘সিল্করুট’। পাঁচ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনকে চালকের আসনে বসাতে তৎপর।
এ লক্ষ্যে বেইজিং অনেক দেশকে বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করে। তবে গত পাঁচ বছরে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে এ ঋণ এক ফাঁদ ছিল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চীনের প্রেসিডেন্টকে। গত সপ্তাহে এ প্রকল্পের বার্ষিক পূর্তি অনুষ্ঠানে এক ভাষণে জিনপিং বলেন, ‘এটি কোনো চীনা ক্লাব নয়, এটি পুরোপুরি মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প।’
তিনি বলেন, ‘বেল্ট এবং রোড’ প্রকল্পে অন্য দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এরই মধ্যে বাইরেই সরাসরি বিনিয়োগ হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। তবে ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারায় বিভিন্ন দেশ চীনের ভূরাজনৈতিক চাওয়ার কাছে কীভাবে আত্মসমর্পণ করবে, সেটাই এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। এর থেকে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, তা ঋণের চেয়ে বেশি হবে কি নাÑএমন বিশ্লেষণ চলছে দেশগুলোর মধ্যে।
গত আগস্টে বেইজিং সফরে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ২০ বিলিয়ন ডলারের রেলওয়ে প্রকল্পসহ চীন-সমর্থিত তিনটি প্রকল্প থেকে সরে আসবে তার দেশ। স্বচ্ছতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল চীনের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। মাল্টিবিলিয়ন ডলারে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর নির্মাণের লক্ষ্যে ঋণ নেয় পাকিস্তান। চীনের কাছে পাকিস্তানের ঋণ এখন প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার। জিবুতির এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। কিরগিজস্তানের এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। মন্টেনেগ্রোর এক দশমিক একজ বিলিয়ন ডলার। মালদ্বীপের এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। চীনের ‘ঋণফাঁদ’ কীভাবে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে, তার বড় নজির শ্রীলঙ্কা। দেশটি চীনের কাছ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ঋণ করে দক্ষিণের হামবানতোতায় একটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে। কিন্তু তার কিস্তি শোধে ব্যর্থ হয়ে গত ডিসেম্বরে বন্দরটিকে চায়না মার্চেন্টস হোল্ডিংসের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে হয়েছে। ছয় দশমিক তিন শতাংশ সুদে নেওয়া ঋণ শোধ করা সম্ভব নয় বোঝার পরই কলম্বোকে এভাবে পিছু হটতে হয়।