চীনের এসএমই

যে শিল্পে পাঁচশ’র কম শ্রমিক কাজ করে, সেটাই ছোট ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) আওতায় পড়ে। চীনে এ সংজ্ঞাটি আরেকটু জটিল। কারণ সেখানে এসএমইর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয় শিল্পের ধরন কেমন, কতজন শ্রমিক কাজ করে, বার্ষিক আয় কত, মোট সম্পদের পরিমাণ কত ইত্যাদি বিবেচনা করে। এ সংজ্ঞাটি এসেছে চীনের এসএমই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে, যারা এসএমইর ধরন কী হবে তা নির্ধারণ করে।

জিউ ও লি’র মতে, ‘চায়নার এসএমইর কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য এখানকার এসএমই খাত মূলধনের স্বল্পতা ও ক্রেডিট অ-অনুমোদন প্রভৃতি কারণে বড় শিল্পের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট।’

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু এসএমই ইন্ডাস্ট্রি তাদের নিরন্তর উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যিই দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার লাভ করছে।

২০০৫ সালে সরকার আইন সংশোধনের মাধ্যমে এসএমই খাত ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এখন এটি ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবা, নির্মাণ, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসায় অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করেছে। এ ধরনের সাপোর্ট এসএমই খাতের উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে এবং এখানে আরও বেশি অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করছে, যা অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক।

চীনে ছোট কোম্পানিগুলো এসএমই ঋণের একটি বড় অংশ দখল করে আছে; কিন্তু প্রোডাকশনে তাদের ভূমিকা অতটা উল্লেখযোগ্য নয়। এর কারণ, সরকারি নীতি এ কোম্পানিগুলোর বিকাশে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

চায়নার এসএমইর মূল বাজার অভ্যন্তরীণ মার্কেট; কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অন্যান্য দেশের উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তারা কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারও একেবারে ছোট নয়।

ফান্ডের সীমাবদ্ধতার জন্য অধিকাংশ এসএমই উদ্যোক্তা শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, যেখানে প্রযুক্তির ঘাটতিকে শ্রম দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যায়।

এসএমই খাতে অর্থায়নের ব্যাপারে স্কট ও ওয়াং কতগুলো উৎসের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে

 

ব্যক্তিগত জমা

যে কোনো ব্যবসার শুরুটা হয় নিজের ব্যক্তিগত পুঁজি থেকে। কারণ এখানে কোনো নির্ধারিত হারে সুদ দিতে হয় না। তাছাড়া ব্যবসার শুরুতে ব্যাংক লোন পাওয়াও কষ্টসাধ্য।

 

নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে

চীনে পারিবারিক বন্ধন অনেক শক্তিশালী। এ কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু হয় আত্মীয় বা বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে। এ ধরনের অর্থায়ন ইউরোপে বা আমেরিকায় তত বেশি হয় না।

ট্রেড ক্রেডিট

ব্যবসার মুনাফার কিছু অংশ অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তিকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি হলো ট্রেড ক্রেডিট। এ ধরনের মাধ্যমে এসএমই খাতে অর্থায়নও চীনে বেশ জনপ্রিয়। কারণ কোনো ব্যবসার শুরুতে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে ট্রেড ক্রেডিটর হিসেবে চার-পাঁচজন হলে অর্থপ্রবাহের পথ কিছুটা মসৃণ হয়।

 

ব্যাংক ঋণ

যে কোনো ব্যবসায় অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণ হলো সর্বোত্তম উপায়। চীনে এসএমই খাতে ব্যাংক ঋণ পাওয়া দুষ্কর। কারণ এখানকার ব্যাংকগুলো রাষ্ট্র মালিকানাধীন এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রগুলোও তারা নির্ধারণ করে। তারা তাদের নিজেদের সুবিধার্থেই ছোট ও মাঝারি শিল্পের তুলনায় বড় ও ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করাকে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে।

আরেকটি ব্যাপার হলো, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের অর্থ ঋণ দিতে আগ্রহী। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য অল্প ঋণ দেওয়াটাকে তারা লাভজনক মনে করে না। তাদের ক্রেডিট রেটিংও অনেক বেশি, যা এসএমই শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

 

চীনে এসএমই খাতে অর্থায়নে বাধা

মু বলেন, ‘এসএমই খাতে অর্থায়ন সারা বিশ্বেই একটু অসুবিধাজনক; কিন্তু চীনে এ সমস্যাটি একটু বেশি। যদিও চীন সরকার এ খাতের সম্ভাবনার দিকটি খতিয়ে দেখে এর প্রবৃদ্ধি, অর্থায়ন ও বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে; তারপরও তা পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে না।’

পিপলস ব্যাংক অব চায়নার তথ্যমতে,

‘চীনে এসএমইর সংখ্যা ১২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, যার ৯৯ শতাংশ হলো ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি। ২০০৫ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবদান ৫০ শতাংশেরও বেশি এবং অর্জিত রাজস্বের ৪৮ শতাংশেরও বেশি এসএমই খাতের। বেকারত্বের হার কমাতে তাদের অবদান বৃহৎ শিল্প থেকে বেশি।’

সরকার এসএমই খাতের বাধা অপসারণে উদ্যোগী হয়েছে, যার ফলে চীনে ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং অর্থনীতির অনেক শাখায় তাদের বিচরণ বেড়েছে। আরেকটি কারণ, সরকার নিজের উদ্যোগে তাদের প্রস্তুত করা পণ্য রফতানি করছে।

তবু বলা যায়, এসএমই খাতের অর্থায়নে এখনও অনেক বাধা আছে, যার মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক মার্কেটের সঙ্গে দুর্বল যোগাযোগ, সেকেলে প্রযুক্তির ব্যবহার। এসব বাধা অপসারণ করা সম্ভব হলে এসএমই খাতকে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত হিসেবে উম্মোচন করা মোটেই সুদূরপরাহত কোনো বিষয় বলে গণ্য হবে না।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০