শেয়ার বিজ ডেস্ক : দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ইস্পাত ও সংশ্লিষ্ট পণ্যে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত শনিবার থেকে আরোপিত এ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এতে বিশ্বের বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী চীনের পাশাপাশি ইরানের রফতানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর আরব নিউজ।
ইউরোপের ইস্পাত উৎপাদনকারীদের অভিযোগ, নিজেদের তৈরির খরচের থেকেও কম দামে ইংল্যান্ডে ইস্পাত বিক্রি করছে চীন, ইরান, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইউক্রেনসহ কয়েকটি দেশের কোম্পানিগুলো। ফলে দামের লড়াইয়ে পাল্লা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ীদের। এর ওপর রয়েছে বিদ্যুতের চড়া দর। সব মিলিয়ে ধুঁকছে ইউরোপীয় অঞ্চলের এ শিল্প।
৭ অক্টোবর থেকে টনপ্রতি ইস্পাতে ১৭ থেকে ৯৬ পাউন্ড (২০ থেকে ১১২ ডলার) পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইইউ।
নতুন এ আইনে ইরানকে প্রতি টন ইস্পাত রফতানিতে ৫৭ দশমিক পাঁচ পাউন্ড শুল্ক গুনতে হবে।
ইরান থেকে ইউরোপে ইস্পাত আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ইউরোপের ইস্পাত সংস্থা ইউরোফের প্রতিবেদনমতে, চীন ও ভারতের পরই ইউরোপে সবচেয়ে বড় ইস্পাত রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে ইরান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ইরান থেকে ইউরোপে ১০ লাখ টন ইস্পাত রফতানি করা হয়। ২০১৩ সালের তুলনায় এটি প্রায় আট গুণ বেশি।
২০১৬ সালে চীন এবং ভারত ইউরোপে ৫৭ লাখ টন এবং ১৯ লাখ টন ইস্পাত রফতানি করেছে। তুরস্কের পর ইরানই মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত উৎপাদন করে। দেশটি বছরে এক কোটি ৭০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইস্পাত উৎপাদন সাড়ে পাঁচ কোটি টনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে ইরান।
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের ইস্পাত নির্মাতারা। এ কারণে সম্প্রতি চীনের ইস্পাতজাত পণ্যের ওপর নতুন করে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)।
ইইউ জানায়, ইউরোপের ইস্পাত বাজারে চলমান প্রতিযোগিতায় ন্যায্যতা আনতে চীনের হট-রোলড স্টিলের ওপর ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।
বৈশ্বিক ইস্পাতের অর্ধেকেরও বেশি উৎপাদন করে চীন। জোটের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করে নিজস্ব ইস্পাতে বৈশ্বিক বাজার সয়লাব করছে চীন। সরকারের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ঋণ, করছাড় ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা লাভ করে চীন কৃত্রিমভাবে ইস্পাতের দাম কমাচ্ছে বলেও অভিযোগ করে ইসি।
ইসির এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে চীনা প্রশাসন। চীনের অভিযোগ, অন্যায্যভাবে চীনের ইস্পাত শিল্পকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে ব্রাসেলস।
জোটের মতে, চীনের অতিরিক্ত ইস্পাত উৎপাদনের কারণে ইইউর ইস্পাত শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বেইজিং জানায়, চীনা ঋণ ব্যবস্থা ও বাণিজ্যের ধরন সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করায় এমন পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইসি। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওয়াং হেজুং জানান, চীনের অতিরিক্ত ইস্পাত উৎপাদনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে ইসি।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ইউরোপে চীনের ইস্পাত রফতানি কমলেও বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ব্রাসেলস। শুল্কবিষয়ক ইসির নতুন আইনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে চীনের প্রশাসন। ওয়াং বলেন, ভর্তুকিযুক্ত ইস্পাত রফতানি বন্ধের পাশাপাশি তা নিয়ন্ত্রণে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন। এ অবস্থায় চীনের অভ্যন্তরীণ শিল্পসংক্রান্ত ইস্যুকে দোষারোপ করে শুল্ক আরোপ করাটা অন্যায্য ও পক্ষপাতমূলক। ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে বেপরোয়া পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে ইইউর বিবাদ চলমান রয়েছে। তবে প্যারিসভিত্তিক অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) মাধ্যমে চীনের সঙ্গে ইস্পাতবিষয়ক দ্ব›দ্ব মেটাতে চায় ব্রাসেলস।
Add Comment