Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:56 pm

চীনে অবৈধভাবে ইন্দোনেশিয়ার নিকেল রপ্তানির তদন্ত শুরু

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ আড়াই বছর আগে ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত অবৈধভাবে জাহাজযোগে চীনে যে ১৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন রুপাইয়ার (ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রা) নিকেল রপ্তানি হয়েছিল, তার তদন্ত শুরু করেছে। খবর: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

করাপশন ইরাডিকেশন কমিশন (কেপিকে) সম্প্রতি এক তদন্তের পর জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে চীনে অবৈধভাবে প্রায় ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন নিকেল রপ্তানি হয়েছিল, যার মূল্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার।

এ কারণে দেশটি রাজস্ব ও রপ্তানি শুল্ক হারায় প্রায় ৫৭৫ বিলিয়ন রুপাইয়া বা ৫১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার।

জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের খনিজ ও খনি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াফিদ বলেন, তার অফিস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে বেইজিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসও।

‘মূল্যবান ধাতু নিকেল রপ্তানি নিষিদ্ধ, তাই আমরা সবকিছু যাচাই করছি,’ তাকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম কোনটান।

এরই মধ্যে নিকেল রপ্তানি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগ ও চীনের শুল্ক প্রশাসনের তথ্যের মধ্যে গড়মিল পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী কমিশন।

এই ধাতুটির উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পায়নি কমিশন। তবে এর খনি সুলায়েসি কিংবা নর্থ মালুকুতে হতে পারে বলে ধারণা কেপিকের পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তার ডিয়ান প্যাট্রিয়ার। এ অঞ্চলে ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম নিকেল উৎপাদন কেন্দ্র অবস্থিত। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অপ্রক্রিয়াজাত নিকেলের রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু প্রক্রিয়াজাত নিকেল, যেমন ফেরোনিকেল ও নিকেল পিগ আয়রন রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে নিকেল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে। মূলত নিকেল প্রক্রিয়াকরণে বিপুল বিনিয়োগ ও নিজ দেশে গলানোর জন্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। তাছাড়া স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করাও তাদের লক্ষ্য। এই ধাতু বিদ্যুৎচালিত গাড়ির (ইভি) ব্যাটারি তৈরির অন্যতম উপাদান।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ অফিসের মুখপাত্র নিরওয়ালা উই হেরইয়ানতো বলেন, চীনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং রপ্তানিকারকদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। এর ফলাফল শিগগির কেপিকেকে জানানো হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মকর্তা প্রফেসর ইরওয়ান্দি আরিফ বলেন, মন্ত্রণালয় রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কোনো সুপারিশ করেনি। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পর থেকে এই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই রপ্তানিসংক্রান্ত অনুমোদন দিয়ে আসছে।

তিনি দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রস্তাবিত বার্ষিক বাজেটে নিকেল রপ্তানির অনুমোদন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বিশেষজ্ঞরা সরকারকে এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। এর সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ইন্দোনেশিয়ার নিকেল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মেইডি ক্যাটরিন লেংকি বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চীনে বিভিন্ন বন্দরে নিকেল খালাস করা হয়েছে, অথবা বলা হয়েছিল এগুলো প্রক্রিয়াজাত নিকেল, বিশেষ করে নিকেল পিগ আয়রন বলা হয়েছিল। কেননা এ ধরনের নিকেলই কেবল আন্তর্জাতিক বন্দরগুলো তাদের গ্রহণ করে থাকে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দুর্বলতার সুযোগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তার।

একই দাবি থিংক-ট্যাংক সেন্টার অব এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক ইয়ুসরি ওসমানের।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির কাছে নিকেল থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে এফডিআই ত্বরান্বিত হয়। তবে ইন্দোনেশিয়া তাদের যুক্তি প্রত্যাখান করেছে।