শেয়ার বিজ ডেস্ক: সদ্য বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে আগের মাসের তুলনায় চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। বায়ুদূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা শিল্প খাতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ অবস্থা স্থায়ী নয় বলেও মনে জানিয়েছেন তারা। খবর রয়টার্স।
চীনের পরিসংখ্যান বোর্ডের (এনবিএস) তথ্যমতে, কারখানার উৎপাদন মানদণ্ড নির্ণয়কারী ম্যানুফ্যাকচ্যারিং পারচেজিং ইনডেক্স (পিএমআই) ডিসেম্বরে ছিল ৫১ দশমিক ৬ পয়েন্ট। আগের মাসে পিএমআই ছিল ৫১ দশমিক ৮ পয়েন্ট।
পিএমআই মান ৫০-এর ওপরে থাকলে মনে করা হয় ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর ৫০-এর নিচে থাকলে উৎপাদন কমেছে ধরা হয়।
চলতি বছর দূষণের বিরুদ্ধে চীনের যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। দূষণ মোকাবিলায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে পরিচ্ছন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি শিল্পের প্রতি জোর দেওয়া হয়। কাঁচামাল পণ্য ব্যবহারে সতর্কতা বেড়েছে। দূষণ কমাতে নি¤œমানের ইস্পাত প্রস্তুতকারী কারখানা বন্ধের পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনছে চীন। এতে গত ডিসেম্বরে সার্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি দাম ও বাড়ছে কিছু পণ্যের।
দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছে চীন। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সির (আইরেনা) তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালের এক গিগাওয়াট বৈশ্বিক সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা এখন ৩০০ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে চীন একাই ১০০ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করবে।
এদিকে চীনে জীবাশ্ম জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছে, যার প্রভাবে দেখা গেছে এ বছর বৈশ্বিক কমোডিটি বাজারে শিল্পধাতু, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও ইস্পাতের দাম সবচেয়ে চড়া ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও শিল্পপণ্যের চাহিদা এবং দামে চলতি বছরের ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ নতুন বছরে অনেক শীর্ষ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং অবকাঠামো ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প কমোডিটি ও জ্বালানির দাম বাড়তে থাকবে।
শিকাগোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিউচারস ইন্টারন্যাশনালের জ্যেষ্ঠ কমোডিটি বিশ্লেষক টেরি রেইলি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন দেশ ২০১৮ সালে কমোডিটি পণ্যে বেশ গুরুত্ব দেবে। এ অবস্থায় আমি মনে করি, কমোডিটি পণ্যের স্বল্পমূল্যের যুগের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।’
বর্তমানে গোটা বিশ্বেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এজন্য এ খাতে প্রয়োজনীয় ধাতব যন্ত্রাংশেরও চাহিদা বাড়ছে। ফলে ট্রান্সমিশন লাইনে ব্যবহƒত তামা, সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তার ও ইলেকট্রিক গাড়িতে প্রয়োজনীয় অ্যালুমিনিয়ামের মতো যন্ত্রাংশগুলোর চাহিদা তীব্র হওয়ায় এগুলোর দামও বাড়ছে।
চলতি বছর বৈশ্বিক কমোডিটি বাজারে তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম চার বছরের সর্বোচ্চ ছিল। বছরের সর্বশেষ বিপণন সপ্তাহে প্রতি টনের দাম ছিল যথাক্রমে সাত হাজার ২৫৯ ও দুই হাজার ২৭০ ডলার।