শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনে ক্রমে জটিল হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই। এ পরিস্থিতিতে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। চান্দ্রবর্ষের ছুটি ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়ি নির্মাতা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো চীনে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার ছুটি শেষ হওয়ার কথা। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষা করছে তাদের কারখানাগুলো চালু করার জন্য। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি এ ছুটি আরও বাড়ানো হয়, তাহলে চীনের পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। খবর: বিবিসি।
বিশ্বের উৎপাদন ক্ষেত্র খ্যাত চীন সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিশ্ব অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন টেক জায়ন্ট অ্যাপলের চীনে দুটি কারখানাই বন্ধ রয়েছে। এভাবে বন্ধ থাকলেও তা বছরের প্রথম প্রান্তিকে আইফোন সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। বিশ্লেষকরা বলছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে আইফোন সরবরাহ চার মিলিয়ন কমবে। এছাড়া এ প্রান্তিকে চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহ কমবে ৩২ শতাংশ। সার্বিকভাবে ২০২০ সালে চীনা স্মার্টফোন সরবরাহ কমবে পাঁচ শতাংশ। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি হুন্দাইসহ জার্মানির ভক্সওয়াগন ও বিএমডব্লিউ চীনে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। অন্য গাড়ি নির্মাতারাও বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চীনে ৭২২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক মার্কিন নাগরিক চীনের উহানের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।৬০ বছর বয়সী ওই মার্কিনি জিনইনতান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন; বৃহস্পতিবার সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে শনিবার বেইজিংয়ের মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান।
গত শুক্রবার একদিনের ব্যবধানে চীনে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত আরও ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সিভিয়ার অ্যাকিউড রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) মহামারিতে মৃতের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০২-০৩ সালের সার্স মহামারিতে বিশ্বব্যাপী ৭৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করা হয়েছিল। সেবার আক্রান্ত হয়েছিল আট হাজারের সামান্য বেশি।
সার্সের তুলনায় নতুন এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার অনেক কম। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭ বিদেশির চীনে চিকিৎসা চলছে বলে দেশটির সরকারি হিসাবে জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত নতুন এ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চীনের বাইরে ২৭টি দেশে নিউমোনিয়া সদৃশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৩২ জনের সন্ধান মিলেছে; এর মধ্যে ফিলিপাইন ও হংকংয়ে দুজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। মৃত দুজনও চীনেরই নাগরিক।
মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালেন চেং বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ কতটা বিষাক্ত তা বলা কষ্টকর। হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা দুজনের মৃত্যু হচ্ছে দেখা গেলেও, এখনও অনেক আক্রান্ত পরীক্ষার বাইরেই থেকে যেতে পারে। ঠিক কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তা সম্ভবত কিছু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা বলতে পারব না আমরা।