শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের তরুণরা পছন্দ অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না, তাদের মধেচলতি বছর প্রায় এক কোটি ২০ লাখ তরুণ-তরুণী চীনের চাকরির বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবেন, অর্থাৎ তাদের স্নাতক শেষ হবে। অথচ চীনের সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী যে তরুণ-তরুণীরা চাকরি বা কাজ খুঁজছেন, এপ্রিলে তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ কাজের বাইরে ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে চীন এ বিষয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে এবং তখন থেকে এটাই সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের অর্থনীতিতে কালো দাগ ফেলেছে তরুণদের উচ্চ বেকারত্ব। কভিড-১৯ মহামারির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মহামারির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গ্রাহক বা ভোক্তাদের ক্ষতি হয়েছে, সে কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
গত বছরের শেষ সময় পর্যন্ত দেশটি দফায় দফায় কভিডজনিত বিধিনিষেধ আরোপ করে। কিন্তু তরুণসহ দেশটির অনেক মানুষ ‘শূন্য কভিড’ নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করলে সরকার শেষ পর্যন্ত বিধিনিষেধ তুলে নিতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও দেশটির তরুণদের বেকারত্বের হার এখনও অনেক বেশি, যদিও গত দুই মাসে চীনের সামগ্রিক বেকারত্বের হার কিছুটা কমেছে।
তরুণদের কর্মসংস্থানে গতি আনতে চীন সরকার বেশ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়া অনবেইজিং থেকে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলে খুচরা বিক্রি ও কারখানা উৎপাদনে গতি এসেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা আরও বেশি আশা করেছিলেন। কারণ এ গতি বৃদ্ধির বিষয়টি ২০২২ সালের এপ্রিলের সাপেক্ষে, যখন চীন কার্যত স্থবির ছিল। দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যকেন্দ্র সাংহাই শহরে ছিল লকডাউন।
চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তাদের মুনাফা মহামারির আগের পর্যায়ে ফেরেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকরা যে ধরনের কাজ খুঁজছেন, বাজারে সেই ধরনের কাজের অভাব, অর্থাৎ বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাহিদার অসামঞ্জস্য রয়েছে।
চীনের জব সাইট ঝিলিয়ানের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মার্চে দেশটির পর্যটন এবং যাত্রী ও কার্গো পরিবহনে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। খুচরা বিক্রয় খাতেও অনেক কাজের সুযোগ আছে।
এছাড়া চীনের নির্মাণ, যোগাযোগ ও ওয়্যার হাউস খাতেও গতি এসেছে। দেশটির গ্রামাঞ্চল থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের আগ্রহ এসব খাতে।
সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ল’র গবেষক নিয়ে রিমিং বলেন, উচ্চশিক্ষিত তরুণরা মূলত প্রযুক্তি, শিক্ষা ও ওষুধশিল্প খাতে চাকরি খোঁজেন, কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব খাতের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পাশাপাশি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষ একসময়কার গতিশীল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের অবস্থাও ভালো নয়। সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতে নজরদারি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগের বিষয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে কোম্পানিগুলো নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। যেসব খাতে শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ, সেসব খাত সংকুচিত হচ্ছে, অথচ স্নাতক ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথতবে জুনে যে তরুণরা স্নাতক সম্পন্ন করবেন, তারা কলেজজীবনের বড় একটি অংশ লকডাউনের মধ্যে কাটিয়েছেন। তাদের ইন্টার্নশিপ বা অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ছিল কম।