Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:50 pm

চীনে পরিশোধিত চিনি রপ্তানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

আয়নাল হোসেন: চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পরিশোধিত চিনি রপ্তানির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বেসরকারি পরিশোধনকারী একটি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছে। ওই আবেদনের ভিত্তিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চিনি রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব রাখা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) আওতায় বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে আট হাজার ৫৪৯টি বা ৯৭ ভাগ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু এই তালিকায় চিনি নেই। তাই চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চিনি রপ্তানির বিষয়ে সম্প্রতি মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুক্তমুক্ত সুবিধায় চিনি রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-চীন পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হলেও রপ্তানি হচ্ছে খুবই স্বল্প পরিসরে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং আমদানি হয়েছে ৮২১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, আমদানি হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার, আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৬৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার, আমদানি হয়েছে এক হাজার ৩৬৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৬০ কোটি ডলার, আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তাই চীনে রপ্তানি বাড়াতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় চিনি রপ্তানি হলে বাজারে দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন চিনি ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হাবীব শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ চিনি পরিশোধন করা হচ্ছে তাতে দেশে কোনো সংকট হবে না। দেশের চাহিদা পূরণে এককভাবে সিটি গ্রুপেরই উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান দৈনিক পাঁচ হাজার টন চিনি উৎপাদন করতে পারে। এরপর অন্যান্য কোম্পানি তো রয়েছেই। শুক্তমুক্ত সুবিধায় চিনির কাঁচামাল আমদানি করা হলে দাম অনেকটা কমে আসবে। তবে বাংলাদেশে মূলত চিনির কাঁচামাল আসছে ব্রাজিল ও ভারত থেকে। চীন থেকে চিনির কাঁচামাল দেশে আসছে না। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে ২১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই চিনির চাহিদা রয়েছে প্রায় চার লাখ টন। এসব চিনির অধিকাংশই মূলত অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি হচ্ছে। সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মুনেম ও দেশবন্ধু গ্রুপ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করছে।  

শুল্কমুক্ত কোটায় চিনি রপ্তানির বিষয়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেসরকারি পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। এ প্রসঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের পাঁচটি পরিশোধনকারী মিল বছরে ৩৩ লাখ টন চিনি পরিশোধন করছে। আর বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৬ লাখ টন। এসব চিনির মধ্যে সিটি ও মেঘনা গ্রুপের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে পাঁচ হাজার টন। আর দেশবন্ধু, ঈগলু, এস আলম ও আবদুল মোনেমের এক হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি ও মেঘনা গ্রুপ অর্ধেক চিনি উৎপাদন করছে। চীনে শুল্ক সুবিধায় বছরে এক মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানি করা গেলে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।