Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:16 am

চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির নতুন কারখানা নির্মাণ টেসলার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে টেসলার কারখানা নির্মাণের ক্ষীণ আশাটুকুও যেন নিভতে চলেছে। সম্প্রতি টেসলার চীনে নতুন কারখানা তৈরির ঘোষণায় সেই আশঙ্কা করছে ভারতের উদ্যোক্তারা। চীনের সাংহাইয়ে তাদের বিদ্যমান কারখানা গিগা ফ্যাক্টরির পাশে অন্য একটি কারখানা নির্মাণ করার কথা জানায় টেসলা। খবর: রয়টার্স ও দ্য ইকোনমিক টাইমস।

নতুন কারখানা নির্মাণ করা হলে সাংহাইয়ের গিগা ফ্যাক্টরি থেকে অন্য দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি রপ্তানি সহজ হবে। আর এতে ভারতের মাটিতে টেসলা যে গাড়ি তৈরিতে ইচ্ছুক নয়, তা সহজে বোধগম্য হচ্ছে।

বর্তমানে সাংহাইয়ের গিগা ফ্যাক্টরি থেকে এশিয়া ও ইউরোপের একাধিক দেশে গাড়ি রপ্তানি করে টেসলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর বিশ্ববাজারে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) রপ্তানির মধ্যে চার লাখ ৮৪ হাজার ১০০টি এসেছে সাংহাইয়ের গিগা ফ্যাক্টরি থেকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পর বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম গাড়ির বাজার ভারত, যেখানে টেসলা ব্যবসা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিল গত বছর। তখন অন্য দেশ থেকে গাড়ি আমদানি করে ভারতে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির ইচ্ছা প্রকাশ করে টেসলা। কিন্তু ভারতে দামি গাড়ির আমদানি শুল্কের পরিমাণ শতভাগ হওয়ায় গাড়ির দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসা শুরু করা থেকে বিরত থাকে সংস্থাটি।

সংস্থাটি জানায়, আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য মোদি সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু টেসলার এই ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে ভারতের মাটিতে কারখানা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় ভারত সরকার। তাদের বলা হয়, ভারতের মাটিতে গাড়ি তৈরি করে তাদের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও যেন গাড়ি রপ্তানি শুরু করে টেসলা। কিন্তু ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান সে পথে হাঁটতে নারাজ। এ নিয়ে টেসলা ও ভারত সরকারের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।

অতীতে একাধিকবার এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। কয়েক দিন আগেও তিনি টেসলার উদ্দেশে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাটি যেন ভারতে কারখানা তৈরি করে ব্যবসা শুরু করে। এমনকি ভারতের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবসায় টেসলা লাভের মুখ দেখবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। কিন্তু চীন থেকে গাড়ি আমদানি করে ভারতের বাজারে বিক্রি করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। যদিও মন্ত্রীর এই আহ্বানেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি টেসলা।

গত বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে টেসলা চীনের সাংহাই প্লান্টে তিন লাখ গাড়ি উৎপাদন করে। এছাড়া বছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফার ধারা দ্বিতীয় প্রান্তিকেও অব্যাহত রাখে টেসলা। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের মুনাফা ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়, প্রান্তিক হিসাবে যা নতুন রেকর্ড। ২০২০ সাল থেকে এখানে উৎপাদিত টেসলার মডেল-৩ সিডান গাড়ি ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। একবার চার্জ দিয়ে এই গাড়ি ৪৬৮ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। আর চীনে স্থানীয় ভর্তুকি ছাড়া এই গাড়ির দাম প্রায় ৪০ হাজার ৩০০ ডলার। তবে সম্প্রতি সাংহাইসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে কভিড সংক্রমণ বেড়ে গেলে বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি এ শহরটিতেও লকডাউন জারি করা হয়। এতে টেসলার সাংহাই কারখানায় উৎপাদন বেশ কয়েক দিন বন্ধ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চীনের পর চলতি বছর ২৪ মার্চ ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে গাড়ি তৈরির কারখানা চালু করে টেসলা। দেশটির রাজধানী বার্লিনের বাইরে অবস্থিত ও আনুষ্ঠানিকভাবে গিগা বার্লিন-ব্র্যান্ডেনবার্গ নামে পরিচিত সাইটে কারখানা চালু করেন টেসলার প্রতিষ্ঠাতা। এখানে ২০২১ সালে গাড়ি নির্মাণ শুরু করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারি ও পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে তা এতদিন শুরু করা যায়নি।