শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছরের এপ্রিলে চীনে শিল্পোৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে বিনিয়োগ ও খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঋণ ঝুঁকি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদ নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির প্রবৃদ্ধি সম্প্রতিক সময়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে। এর মধ্যে নতুন এ উপাত্ত চীনের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (এনবিএস) তথ্যমতে, এপ্রিলে চীনের শিল্প-কারখানাগুলোয় উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত শতাংশ বেড়েছে। আগের মাসে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় শতাংশ। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক চার শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে শিল্পোৎপাদন।
এপ্রিলে শিল্পোৎপাদন বাড়লেও চীনের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান মানদণ্ড নির্দেশক খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধিতে ছিল শ্লথগতি। প্রতিবেদনমতে, গত মাসে দেশটির খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৯ দশমিক চার শতাংশ। আগের মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক এক শতাংশ। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রত্যাশার চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে এ মাসে, যা এক বছরের মধ্যে শ্লথগতি।
খুচরা বিক্রির পাশাপাশি কমেছে স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগও। বছরের প্রথম চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত শতাংশ। অথচ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে সাত শতাংশ। ১৯৯৯ সালের পর এ খাতে প্রবৃদ্ধিতে এটিই সবচেয়ে কম।
ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভানস-পিচার্ড বলেছেন, চীনে শীতের সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হওয়ায় এপ্রিলে শিল্পোৎপাদন ভালো হয়েছে। এছাড়া নতুন বছরের ছুটির কারণে ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদন কম হওয়ায় এ মাসে বাড়তি চাপে উৎপাদন ভালো হয়েছে।
শিল্পোৎপাদন ভালো হলেও প্রকাশিত প্রতিবেদনের অন্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে চীনের অর্থনীতি তার গতি হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পিচার্ড। তিনি বলেন, ভোক্তা খরচ খুচরা বিক্রির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর ভোক্তা খরচই চীনা অর্থনীতির অন্যতম মানদণ্ড। এ খাতেই প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি পায়নি দেশটি।
এ উপাত্ত এমন সময় প্রকাশিত হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য উত্তেজনা চলছে। বিভিন্ন পণ্যে শুল্কারোপের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে চীনা রফতানি নিয়ে অশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফা একে অন্যের ওপর শুল্কারোপের হুমকি দিলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই দেশ বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগামী ১৫ থেকে ১৯ মে ওয়াশিংটনে আলোচনায় অংশ নেবে চীনা প্রতিনিধিদল। এতে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ হি। চলতি মাসের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ে আলোচনায় বসে। এতে সব বিষয়ে একমত না হতে পারলেও চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। বাকি বিষয়গুলো সমাধানে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসবেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।