Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 8:27 am

চীন ও আরব দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ চুক্তি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীন ও আরব দেশগুলোর মধ্যে হাজারো কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির কথা ঘোষণা হয়েছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়। খবর: ডয়চে ভেলে ও আল জাজিরা।

সৌদি আরবের যুবরাজ সালমান বলেছেন, আমি পশ্চিমা দুনিয়ার সমালোচনা উপেক্ষা করেছি। আমরা যেখানে সুবিধা পাব, যেখানে সুবিধাজনক ডিল পাব, সেখানেই যাব।

রিয়াদের সম্মেলনে চীন থেকে অনেক বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতি অংশ নিয়েছেন।

গত মার্চে সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সৌদি আরামকো চীনের সঙ্গে দুটি বড় বিনিয়োগ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

সৌদি যুবরাজ বলেছেন, চীনে তেলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তার কিছুটা সৌদি আরব পূরণ করছে। চীন আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, চীন আমাদের সহযোগী দেশ। আমরা সহযোগিতার ভিত্তিতে এগোচ্ছি।

সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল ফলিহ বলে, চীনের সঙ্গে আরব দুনিয়ার প্রতিটি চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তেলের বাইরে অন্য শিল্পের ক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগ চুক্তি হবে, তা আরব দুনিয়ার চেহারা বদলে দিতে পারে।

সম্মেলন শেষ হলে চুক্তির পরিমাণ জানানো হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সৌদি আরব সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই এই বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হলো।

কভিড-১৯ মহামারিতে চীন ও আরব দেশগুলোর অর্থনীতি হোঁচট খেয়েছে। অর্থনীতি চাঙা করতে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে চাইছে চীন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরব ও চীন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও সরাসরি বিনিয়োগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এছাড়া দুই দেশের নেতারা সৌদি ভিশন-২০৩০ এবং বেইজিং রোড অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য অর্জনের ঐক্যেও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে দেখছেন যুবরাজ সালমান। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার ও বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোয় চীনা কোম্পানির সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাইছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে আছে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের ‘ফিউচারিস্টিক’ মেগাসিটি। প্রযুক্তিনির্ভর শহরটিতে ঢুকতে হলে মুখ শনাক্ত ও নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল উৎপাদানকারী দেশ। অন্যদিকে চীন সৌদি তেলের প্রধান ভোক্তা। দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল সৌদি আরব। কিন্তু সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে চীন।

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ছিল শেষকথা। কৌশলগত অংশীদারির ছত্রছায়ায় যুক্তরাাষ্ট্র এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিকভাবে সম্পৃক্ত। গত বছরের জুলাইয়ে উপসাগরীয় ধনাঢ্য আরব দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে গিয়ে এমন শূন্যতা তৈরি করবে না, যার সুযোগ নেবে চীন, রাশিয়া বা ইরান। কিন্তু বাইডেনের অঙ্গীকারের পরও ঠিক তেমনটাই ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে তার আরব মিত্ররা তেহরান ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং মস্কোর সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে হাইব্রিড নীতি গ্রহণ করেছে। সৌদি-ইরানের মধ্যে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি হয় চীনের মধ্যস্থতায়। বাইডেন প্রশাসন যদিও বা প্রকাশ্যে এ চুক্তির গুরুত্বকে খাটো করে দেখিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, তবু তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান এই প্রভাবে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা ও তৎপরতা চোখে পড়ে।

গত দুই দশকে নিজস্ব তেল ও গ্যাস সম্পদের উত্তোলন বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে উপসাগরীয় তেলের খুব বেশি দরকার হয়তো তার নেই, তারপরও এই অঞ্চলের মোড়ল হিসেবে নিজ অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে, যাতে চীনের সঙ্গে যেকোনো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বেইজিংকে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।