Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:36 pm

চীন থেকে আসা ৩৬১ জনকে রাখা হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের উহান নগরীতে আটকেপড়া ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে কোনো এক সময় ঢাকা ফেরার পর তাদের সবাইকে আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও থাকবেন। পর্যবেক্ষণের এ সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেন ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সেজন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহŸান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলছেন, চীন থেকে যারা ঢাকা আসছেন, তাদের খবর সময়ে সময়ে জানানো হবে। হজ ক্যাম্পে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

উহানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি জানাতে শুক্রবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আশকোনায় পর্যবেক্ষণে যাদের সুস্থ পাওয়া যাবে, তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে চীনের উদ্দেশ্যে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। তবে ঠিক কখন ওই ফ্লাইট ঢাকায় ফিরে আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘(চীন থেকে যারা ফিরছেন তাদের সঙ্গে) যারা দেখা করার জন্য ব্যাকুল হবেন, আমরা তাদের আহŸান করবÑতারা যেন দেখার জন্য ব্যাকুল না হন, জোরাজুড়ি না করেন। আমরা তাদের টাইম টু টাইম খবর দেব। সে খবর দেওয়ার ব্যবস্থাও আমরা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের আনার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তারা দেশের সন্তান, তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমাদের। এটাও আমাদের দায়িত্ব যদি কেউ সংক্রমিত হয়Ñতা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, আমাদের দেশ যাতে নিরাপদে থাকে, সেজন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। ছাত্রছাত্রীদের দুগর্তির কথা শুনে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের স্বদেশে নিয়ে আসার জন্য। চীন সরকার বলেছিল ১৪ দিন আগে তাদের রিলিজ করবে না।

গতকাল আমাদের জানিয়েছে একটা পকেট পেয়েছে যখন আমাদের দেওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আপনারা নিয়ে আসেন।’

চীন থেকে দেশে ফিরতে ১৯টি পরিবার, ১৮ শিশু এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই শিশুসহ ৩৬১ জন নিবন্ধন করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খুব সেনসিটিভলি এদের হ্যান্ডেল করব, কোয়ারেন্টাইনে রাখব। এ সময় পরিবারের কেউ যেন দেখা করার চেষ্টা না করেন। এরা কেউ অসুস্থ না, কিন্তু আমরা জানি না ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।’

উল্লেখ্য, মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এর লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। নভেল করোনা ভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেনÑতাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা।

গত এক মাসে শুধু চীনেই ১০ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের। চীনের বাইরে আরও ১৮ দেশে প্রায় ১০০ মানুষ নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এবং কয়েক জায়গায় মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর খবর আসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনা ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে।

চীনের যে প্রদেশ থেকে এ ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সে হুবেইয়ের বেশিরভাগ এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত ১০ দিন ধরে। অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখায় প্রায় ছয় কোটি মানুষকে সেখানে আংশিক বা পুরোপুরি অবরুদ্ধ দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের উহান ও চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তবে দেশে ফেরানোর পর তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।

উহানে আটকে পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বলেন, সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। অবরুদ্ধ দশার মধ্যে ভুগতে হচ্ছে খাদ্য সংকটে। এ অবস্থায় দ্রæততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরতে চান তারা। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পুরো ধাপ পেরোতেও তারা রাজি।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, উহান ও এর আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। সপ্তাহে সাত দিন +৮৬ ১৭৮-০১১১-৬০০৫ নম্বরে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা সহায়তা পাওয়া যাবে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলেও বলেন জানান ওই কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, উহানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি ফ্লাইট নেই, আছে কুংমিংয়ের সঙ্গে। সেখানে যেহেতু পরিস্থিতি এরকম খারাপ না, সেহেতু ফ্লাইট বন্ধ করা হয়নি। তবে এই সময় চীনে না যেতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।