নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকাভিত্তিক পরিবহন মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল বুধবার বিআরটিসি ভবনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর কারণে চালকরা আগে ওঠার অসুস্থ প্রতিযোগিতা করেন। আর এ থেকেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তাই দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই এবং প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এবার থেকে পরিবহন মালিকরা চালকদের নিয়োগ দেবেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহাখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালামসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সবাই এ আইনের পূর্ণ সমর্থন করি। এ আইন ১৯৮৩ সালের আইন থেকে অনেক সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য। এতে আমরা সমর্থন জানাই। তবে এ আইনে জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দেব। এগুলো সরকার মানলেও সমর্থন থাকবে, না মানলেও সমর্থন থাকবে।
এনায়েত উল্যাহ জানান, আগে বাস কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ দিত না বললেই চলে। কিন্তু এ আইনে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। আগামীকাল থেকে কোনো গাড়ি চুক্তিভিত্তিক চলবে না। এভাবে চললে পারাপারি (আগে ওঠার প্রতিযোগিতা) বেশি হয়, দুর্ঘটনা বাড়ে। এটা করতে দেওয়া হবে না। যে কোম্পানি এটা মানবে না, তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে। আর সমিতির আওতায় হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল থেকে আমরা প্রতিটি বাস টার্মিনালে চেক করব, কোনো গাড়ি ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স ছাড়া চলে কি না দেখব। কারও (চালকের) কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে তাকে চলতে দেওয়া হবে না। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালিকদের সময় দিচ্ছি; তারা যেন এর মধ্যে সবকিছু ঠিক করে নেন।’ এ সময় তিনি চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করতে সড়কের পাশে টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখতে সিটি করপোরেশনকে আহ্বান জানান।
পরিবহন পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চুক্তি অর্থাৎ গাড়ির মালিককে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা দেওয়ার শর্তে চালকদের গাড়ি চালাতে দেওয়া হয়। ওই অর্থ নিশ্চিত করতে এবং নিজেদের আয় আরও বাড়ানোর জন্য চালকরা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। যে কারণে প্রায়ই রেষারেষিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আবুল কালামসহ অন্যান্য নেতা। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সড়ক পরিবহন আইনও অনুমোদন করে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই মালিক-শ্রমিক কর্তৃপক্ষ চুক্তির ভিত্তিতে গাড়ি রাস্তায় নামানোর পদ্ধতি থেকে সরে এলো বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধের ঘোষণা
