নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (এমএলএ) চুক্তির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তিন মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে বিএফআইইউর একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ গতকাল বুধবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
পরে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘অর্থ পাচার ও ফেরানোর বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে আমরা তিন মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত সময় দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এ বিষয়ে সরকার টু সরকার চুক্তির বিষয়ে বলেছে। এটা বিএফআইইউর প্রতিবেদনে ছিল না।’
দুদকের তৎপরতা নিয়ে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছে জানিয়ে রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘বলেছে, অর্থ পাচার ও ফেরত আনার বিষয়ে দুদক ঘুমিয়ে আছে। এত দিন কাজ হয়নি। এখন হাইকোর্টের আদেশের পরে …।’
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করার ইচ্ছা পোষণ করে মঙ্গলবার হাইকোর্টে হলফনামা আকারে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন বিএফআইইউর প্রধান ইউনিটের প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস।
দেশগুলো হচ্ছেÑযুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চায়না।
এই দেশগুলোর সঙ্গে এমএলএ চুক্তি করার আগ্রহের কথা বলা হয় হলফনামায়। অর্থ ফেরাতে কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, তা জানাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিএফআইইউকে অনুরোধ করেছিল। পরে বিএফআইইউ এসব দেশের সঙ্গে চুক্তির যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানায়।
এর মধ্য দিয়ে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে এই দেশগুলোয় অর্থ পাচার হতে পারে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কিত মামলার তথ্য-প্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই অনুরোধ এসেছিল বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের তথ্য চাওয়া হয়নি বলে গত ১০ আগস্ট ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট।
এরপর ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত বলেছিলেন, রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য ‘বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে’।
এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বিএফআইইউকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। বিএফআইইউর প্রতিবেদনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কোনো চিত্র আসেনি।