নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় নারী শ্রমিকদের তৈরি চুমকি (কারচুপি) বসানো পোশাক যাচ্ছে রাজধানীতে। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে কারচুপির শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস ও ওড়না।
সৈয়দপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার নারী ঘরে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন কারচুপির এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিভিন্ন উৎসবে
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বাড়তি আয়ের আশায় তাদের সঙ্গে কারচুপি বা কাপড়ে চুমকি বসানোর কাজ করে।
উপজেলার ঢেলাপীরের উত্তরা আবাসন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত নারী, বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী কাপড়ে কারচুপি বসাচ্ছে। বিশেষ ফ্রেমে পেতে তাতে টান টান করে কাপড় বসিয়ে আপন মনে কারচুপি বসিয়ে যাচ্ছে তারা।
কথা হয় উত্তরা আবাসনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ার সঙ্গে। ওই শিক্ষার্থী বলে, মায়ের সঙ্গে কারচুপির কাজ করছি। এতে বাড়তি আয় হবে ও কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে। প্রিয়ার বাবা পেশায় বাবুর্চি। এলাকার কারচুপি কারিগর ও হোটেল শ্রমিক আমিনুর রহমানের স্ত্রী পারভিন আক্তার ও তার মেয়ে বৃষ্টি এবং ঝরনা বলেন, প্রায় সারা বছর ধরে কারচুপির কাজ চলে। তবে বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে ঈদে কাজের চাপ বেড়ে যায়।
মোক্তার আলীর স্ত্রী নাছিমা বেগম সংসারের হাল ধরতে প্রায় ১০ বছর ধরে কাপড়ে কারচুপি বসান। তিনি বলেন, পাঁচ মেয়ে ও ছেলের সংসার আমার। কারচুপির আয়ে ভালোই চলে। আমাদের আয় দিয়ে দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। বড় মেয়ে মুক্তা আকতার আইএ পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট মেয়ে মরিয়ম নবম শ্রেণিতে পড়ছে।
উপজেলার কাজিহাট, মুন্সিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, হাতিখানা, নতুন
বাবুপাড়া, ইসলামবাগ, গোলাহাট, রসুলপুর, বার্মাসেলের বাড়ি বাড়ি চলছে কারচুপি বসানো পোশাক তৈরির হিড়িক। শাহেদা আশরাফী বলেন, এ কাজে সৈয়দপুরের শ্রমিকরা খুবই দক্ষ। তাই ঢাকা থেকে প্রচুর অর্ডার আসে। প্রতি মাসে হাজার হাজার শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস ও ওড়নার অর্ডার আসে। তিনি আরও বলেন, মহাজনরা ঢাকা থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে কাপড়, উপকরণ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। আমরা শুধু কারচুপির কারুকাজ করে দিই।
ঢাকার মহাজন আরমান আলী ও সিদ্দিকুল ইসলাম ঢাকা থেকে ই-মেইলে অর্ডার নিয়ে পরে এসে ডিজাইন বুঝিয়ে দেন নারী শ্রমিকদের। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন জর্জেট বা শিপন কাপড়ের থান, বিভিন্ন ধরনের চুমকি, রেশমি সুতা, গাম প্রভৃতি। কাপড়ে চুমকি করতে এসব উপকরণের দরকার হয়। মহাজনের অর্ডার পেলেই নারী শ্রমিকরা রাত-দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারচুপির কাজে। কাপড়ে কারচুপি বসিয়ে একজন নারী শ্রমিক দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন।
কারচুপির উপকরণ চীন থেকে
আমদানি করা হয়। আর ভারত থেকে আনা হয় কাপড়। চাহিদা বাড়লে এসব পণ্যের দামও বাড়ে।
সৈয়দপুর কারচুপি সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, রাজধানীর বড় শপিংমল ও মার্কেটে সৈয়দপুরের তৈরি কারচুপির পোশাক বিক্রি হয়। বিয়ে, পূঁজা ও ঈদে এসব পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়।
তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী