মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: পেরিলা নতুন জাতের ভোজ্যতেল জাতীয় ফসল। সয়াবিন ও সর্ষের মতো পেরিলার বীজ থেকে ভোজ্যতেল উৎপন্ন করা হয়। পেরিলার আদি নিবাস চীন দেশে হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে বিশ্ব দরবারে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিত। স্বল্পমেয়াদি ও লাভজনক হওয়ায় বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে কৃষকরা এ ফসল চাষাবাদে ঝুঁকছেন। এর মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গাও।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় উচ্চফলনশীল ভোজ্যতেল ফসল পেরিলার পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। চাষে সফল হলে একই জমিতে চারটি ফসল ফলানো সম্ভব হবে।
দামুড়হুদার নাশতিপুর গ্রামের কৃষক খালিদ হাসান জানান, তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনা খরচে ২০০ গ্রাম বীজ পেয়ে নিজেই চারা তৈরি করে ১৫ কাঠা জমিতে পেরিলা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে গাছে ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে বীজ বাদে সার ও বালাইনাশকসহ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। গাছ ও ফুল-ফল দেখে মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে।
একই উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, আমিও কৃষি অফিস থেকে ২০০ গ্রাম বীজ নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম দিকে বীজতলা করেছিলাম। সাধারণত পেরিলার চারার বয়স ২৫ দিন হলে রোপণ করা ভালো।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, লোকনাথপুর, দর্শনা, মদনা ও কার্পাসডাঙ্গায় প্রাথমিকভাবে কয়েকজন কৃষক কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পেরিলা চাষ করছেন। কৃষকরা সফল হলে উপজেলায় এর চাষ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়বে। এতে যেমন ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণ হবে, আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আযহারুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো আমাদের এখানে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি পেরিলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পেরিলা থেকে উৎপাদিত তেলের দামও ভালো। এটা ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সম্ভব।
সাধারণত উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটিতে পেরিলার চাষ ভালো হয়। জুলাই-অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এ ফসল চাষের উপযুক্ত সময়। রোপা আউশ ও পাট কাটার পর পতিত জমিতে রোপণ করলে জমির একটি বাড়তি ফসল ঘরে উঠবে। ৯০ দিনের ফসল হলেও বীজতলা থেকে চারা তৈরি করে রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে উঠে যায়। এ সময় সাধারণত কম-বেশি বৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই সেচ তেমন একটা লাগে না। সামান্য সার ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, পেরিলার শতকরা ৬৫ ভাগে মেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এর তেল মানবদেহের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষ করে হƒদযন্ত্র, মস্তিস্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি খুবই কার্যকর। এর পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
তিনি জানান, পেরিলা উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরে এক দশমিক তিন টন থেকে এক দশমিক পাঁচ টন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে কেজিতে ৪০ শতাংশ তেল উৎপন্ন হলে এক হেক্টরে এক হাজার ৪০০ কেজি পেরিলা উৎপন্ন হবে। গড়ে ওই পরিমাণ পেরিলা থেকে তেল উৎপন্ন হবে ৬০০ কেজির মতো। তেলের বাজারমূল্য দুই হাজার ২০০ টাকা হলে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা প্রায় দেড় কোটি টাকার তেল বিক্রয় করতে পারবেন।