প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: দুই বছর ধরে চাষিরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। এ বছরও অনেক আগ্রহ নিয়ে বোরো ধানের আবাদ করেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চুয়াডাঙ্গার মাঠে মাঠে ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ফসল দেখে উৎফুল্ল ছিলেন চাষিরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনি আঘাত হানার খবর পাওয়ায় একযোগে ধান কাটা পড়ে। এতে শ্রমিকের মূল্য বেড়ে যায়। বিঘাপ্রতি ধানকাটা, বাঁধা, মাড়াই ও বাড়িতে পৌঁছানোসহ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়, যে কারণে অনেক কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেননি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ছয় হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে, আলমডাঙ্গায় ১২ হাজার ৫১৪ হেক্টর জমিতে, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে ও জীবননগর উপজেলায় সাত হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। আবাদকৃত জমির মধ্যে ধান কাটা হয়েছে ৩০ হাজার ১০১ হেক্টর জমির এবং মাঠে ধান খাড়া ও মাঠে কাটা অবস্থায় আছে ছয় হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে। ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে সদর উপজেলায় ৯১ শতাংশ, আলম ডাঙ্গায় ৭৫ শতাংশ, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৭ শতাংশ ও জীবননগর উপজেলায় ৯০ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, মাঠে যে ধান কাটা হয়েছে এবং যেগুলো কাটতে বাকি আছে, উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জীবননগর উপজেলার পাথিলাব্লকের পুরোনো তেঁতুলিয়া গ্রামের চাষি রাজিব হোসেন বলেন, দুই বিঘা হাইব্রিডসহ ১১ বিঘা ধান ছিল তার। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্টের মধ্যে আছি। ঈদের আগে কিছু কেটেছি, কিছু পরে কেটেছি। বিলের ধারের জমিতে পানি বেঁধে গেছে। এতে ধান ও বিচালি দুটোতেই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দুই বিঘা ধান জাউলি (ক্ষেতের মধ্যে এক জায়গায় করে রাখা) দিতে পেরেছি। বাকি ধান মাঠে মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে ধান গোছাতে পারিনি।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল আলম লিটন জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে মাইকো-১ জাতের হাইব্রিড ধানের চাষ করেছিলেন। ধান না পাকার কারণে ঈদের আগে কাটতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে একযোগে ধান কাটা পড়ে। এতে শ্রমিকের মজুরি দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। তারপর আবার ঈদের দিন থেকে বৃষ্টি নেমে যায়। এ বৃষ্টির কারণে ধানি জমিতে হাঁটুপানি জমে গেছে। অন্যদিকে জমিতে রাখা কাটা ধানে অঙ্কুরোদ্গম ঘটছে। এতে ফসলের ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। অন্যদিকে যে ধান কাটা হয়নি, সেগুলো জমিতে নুয়ে পড়ায় চিটা হয়ে যাচ্ছে।
দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালি গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলাম । আমার ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। আর কেটে রাখা পাঁচ কাঠা জমির ধান পচে গেছে। ঈদের আগে ধান ৬০ শতাংশের নিচে পাকার কারণে কাটতে পারিনি। চলতি মৌসুমে বিচালি হবে না। এমন আবহাওয়া এর আগে দেখিনি। এ বছর খুব ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেলাম। আবহাওয়া যদি ভালো হয়, তবে প্রত্যাশার অর্ধেক পেতে পারি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, এরই মধ্যে জেলার ৮৮ শতাংশ ধান মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এ জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
তবে যেসব কৃষক ধান কাটতে পারেননি, তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। শ্রমিকের মজুরি বেশি থাকায় ধান না কাটার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ বছর এমনিতে ধানের দাম কম। ফলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় না ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
বছরে ৩৫ কোটি টাকার গবেষণা হয় বাকৃবিতে
প্রতিনিধি, বাকৃবি: এ পর্যন্ত তিন হাজার ৪৭৬টি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। বর্তমানে প্রায় ৫৭১টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ চালু রয়েছে। এখন প্রতি বছর বাউরেস থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া এখন ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার গবেষণা প্রকল্প চলমান। এ পর্যন্ত এক হাজার ২৫৯টি প্রকল্প সংবলিত তিনটি বই প্রকাশ করেছে বাউরেস।
বাউরেসের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রাক্কালে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাউরেসের বিদায়ী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান। গতকাল বাউরেসের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার সময়ে তিনটি বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১১ জন কৃষককে অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি কৃষি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ৫০ জন শিক্ষককে গ্লোবাল রিসার্চ ইমপ্যাক্ট রিকোগনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত দুই বছরে ৮টি জার্নাল ইস্যু প্রকাশ করা হয়েছে। বাউরেস থেকে প্রকাশিত জার্নালটি আধুনিকায়ন করে সম্পূর্ণরূপে অটোমেশন করা হয়েছে।
ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান আরও বলেন, গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল প্রকাশনাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাউরেস কর্তৃক প্রতি আর্টিকেলের জন্য গবেষককে ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ ডলার থেকে এক হাজার ডলার প্রদান করা হচ্ছে। গত দুই বছরে গবেষণা প্রকল্পের অধীনে ২৬৮ জন এমএস (মাস্টার্স) ফেলোকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। অর্থ সহায়তা বৃদ্ধির
ফলে ২০২১ সালে বাকৃবি গবেষকরা ৫৫৮টি গবেষণা প্রকল্প স্কোপাস জার্নালে প্রকাশ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ইউজিসি থেকে বিশেষ বরাদ্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট, দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে আসে এই গবেষণা প্রকল্পের অর্থ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনÑবাউরেসের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম মমিনুল ইসলাম, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মা, বাকৃবি জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপপরিচালক দীন মোহাম্মদ দীনু এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরা।