মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: পাট কাটার ভরা মৌসুম হলেও পানির অভাবে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা পাট কাটতে গড়িমসি করছেন। অনেক কৃষকের ক্ষেতের আশেপাশে নিচু জমি থাকলেও তা রয়েছে পানিশূন্য। আবার সামান্য পানি থাকলেও আঁটিপ্রতি ছয় টাকা হারে টাকার বিনিময়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় তিন হাজার ৭৯৭ হেক্টরের বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আর এবার আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় এক হাজার ৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় সাত হাজার ২৪৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩৫ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় এক হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমি।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫ মেট্টিক টন ও হেক্টরে ১৩.৫ বেল পাট উৎপন্ন হচ্ছে।
সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ জোতি জানান, আমি দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৩ মণ ফলন হবে। তবে আমাদের এলাকায় পাট জাগ দেয়ার জায়গার ভীষণ সংকট। এ সময় পুকুরে পানি থাকে না। পানি কিনে জাগ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ে।
আলমডাঙ্গার মাজহাদ গ্রামের তরিকুর রহমান মল্লিক জানান, অতিবৃষ্টি হলে পাট জাগ দেয়ায় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি হয়েছে কম। মাঠ-ঘাটে কোথাও পানি নেই। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও জাগ দেয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছেন না।
দামুড়হুদার মোক্তার গ্রামের কৃষক সোহান বলেন, চলতি বছর তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু করেছিন। তবে পানি না থাকায় ভৈরব নদীতে পাট নিয়ে যেতে হবে। এতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ বেশি হবে।
একই উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিক বলেন, এবার নিচু জমিতে পানি না থাকার কারণে নসিমন ভাড়া করে ভৈরবে পাট নিয়ে যেতে হবে। পচানোর পর নিয়ে আসতে হবে। এমনিতে এ বছর পাটের বাজার ভালো নয়।
জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। এ বছর পানির সংকট আছে। স্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে পাট পচাতে হবে। যেখানে নদী আছে সেখানে খরচ কম হয়। পাটের ন্যায্য দাম কৃষক না পেলে বিকল্প আবাদে ঝুঁকবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০ হাজার ৫২৭ হেক্টর বা এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৫২ দশমিক পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা বলছেন এ বছর পানি না থাকায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ বেশি পড়বে। পাটখড়ি বাদে বিঘাতে যদি ১০ মণ পাট হয় তাহলে ১৮০০ বা ১৯০০ টাকা মণপ্রতি পাট বিক্রয় হলে বিঘাপ্রতি ১৮ হাজার বা ১৯ হাজার টাকা পাবেন একজন কৃষক। পাটের বর্তমান বাজার থাকলে সে ক্ষেত্রে পাটখড়িই লাভ হবে কৃষকের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাট কাটা শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় পাটের বড় সমস্যা পানির অভাব। পানির অভাবে ভালোভাবে পাট পচাতে পারেন না অনেক কৃষক।
তিনি আরও বলেন, তবে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচালে অল্প খরচে পাট পচানো সম্ভব। এ পদ্ধতিতে পাটের মানও ভালো হয়। এতে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। তারা লাভবান হবেন।