Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:15 pm

চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে শরিফা আবাদ করে সফল কৃষক

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: শরিফা ফলটি সাধারণত ঘরের আঙিনায় দেখা যায়। অনেক স্থানে মেওয়া হিসেবে পরিচিত ফলটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে চুয়াডাঙ্গায় শরিফার আবাদ করে ভাগ্য বদলিয়েছেন দুই সহোদর সাদ্দাম হোসেন ও হƒদয় মোল্লা। সুস্বাদু ফল হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় এই ফলের বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন আরও অনেক কৃষক।

জেলার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে সরকারি চাকরি না পেয়ে বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি নার্সারির সঙ্গে মিশ্র ফলের বাগানও শুরু করেন। কুলের বাগান দিয়ে তার মিশ্র ফলের বাগান শুরু হয়। তবে এতে সুবিধা করতে না পেরে থাই পেয়ারা সুপার-১০ আবাদ করে সফলতা পান।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে ভারতে বেড়াতে গিয়ে দেখেন, গাছে অসময়ে শরিফা ধরে আছে। সেখান থেকে ৪০০টি শরিফার চারা এনে পেয়ারার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তিন বিঘা জমিতে রোপণ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শরিফা একটি লাভজনক চাষ। জেলাব্যাপী এ চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা ও জীবননগরের রায়পুর গ্রামে ছয় বিঘা জমিতে শরিফা বাগানের আবাদ হয়েছে। এছাড়া বর্তমান কৃষি উদ্যোক্তারা এই ফলের আবাদ করার জন্য রায়পুর মোল্লা নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। শরিফা বাগান করতে হয় উঁচু জমিতে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০-১২০টি গাছ লাগানো যায়। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা দরে।

উদ্যোক্তা হƒদয় মোল্লা জানান, শরিফা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। গাছ লাগানোর আট মাসের মাথায় এতে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার তিন মাসের ফল সংগ্রহ করা যায়। এক বিঘা জমিতে বছরে ৮ মেট্রিক টন ফল পাওয়া সম্ভব।

প্রতি কেজি শরিফা বিক্রি হয় আকারভেদে ২৫০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এর চাহিদা রয়েছে।

উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে পেয়ারায় লাভ কম হওয়ায় ভারতে বেড়াতে গিয়ে অসময়ে শরিফা দেখে নিশ্চিত হন যে, এটি বারোমাসি শরিফা। তখন তিনি ৪০০টি চারা নিয়ে আসেন। সেখানে প্রতিটি চারার দাম তিন টাকা হলেও এখানে চারা আনা পর্যন্ত মোট খরচ হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। লাগানোর প্রথম বছরই কিছু ফল পান। গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকার শরিফা বিক্রি করতে সক্ষম হন। আর চতুর্থ বছরে ৪৭ লাখ টাকা পর্যন্ত শরিফা বিক্রি করেন।

তবে চলতি বছর করোনার কারণে ফলের দাম কিছুটা কম জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছর আম্পান ও ঘূর্ণিঝড়ে বাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৫ লাখ টাকাসহ এ পর্যন্ত ৬২ লাখ টাকার শরিফা বিক্রি করেছেন। এছাড়া চলতি বছর আরও ফল বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।

সাদ্দাম ও হƒদয়ের বাবা রুহুল কুদ্দুস জানান, ছেলেদের পরামর্শে নার্সারিসহ ফলের বাগান করে পরিবারে সফলতা এসেছে। তিনি বাবার কাছ থেকে ১০ বিঘা জমি পেয়েছিলেন। বর্তমানে বাড়ি-ঘরসহ গ্রামের মাঠে ৭০ বিঘা জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমিতে নার্সারি ও মিশ্র বাগান মিলে আবাদ করেছেন। আরও তিন বিঘা জমিতে শরিফার আবাদ করেছেন, সেখানে চারার বয়স হয়েছে ছয় মাস হয়েছে। আগামীতে ৩০ বিঘা পর্যন্ত শরিফা আবাদ করার পরিকল্পনা আছে বলে তিনি জানান। 

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারমীন আক্তার বলেন, অন্যান্য ফলের বাগান থেকে শরিফা বাগানে খরচ কম, বাজার মূল্যও ভালোÑযে কারণে এটি লাভজনক। এ ফলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাগান তৈরিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘শরিফা একটি অপ্রচলিত ফসল। জেলায় এ ফলের বাগান শুরু হয়েছে। এটি উচ্চমূল্যের একটি ফল, বাজারে দামও বেশি। এই ফলের বাগান করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাগান করতে কৃষকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।’