চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে বাণিজ্যিক কুল চাষ, লাভবান চাষিরা

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: বাণিজ্যিকভাবে চুয়াডাঙ্গায় গড়ে উঠেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের কুল বাগান। ভরা মৌসুমে পাকা-কাঁচা কুলে থোকায় থোকায় ভরে গেছে বাগানগুলো। বাজারে বলসুন্দরি, কাশ্মীরি, ভারতসুন্দরি ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় জেলায় ছোট-বড় বাগান গড়ে উঠেছে। অল্প সময়ে কুল চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা ঝুঁকছেন কুল চাষে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ কোটি টাকার কুল বিক্রি হবে আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।

তবে কুলচাষিরা বলছেন, আড়তদারদের অনিয়মের কারণে বাগানমালিকরা দাম কম পাচ্ছেন। আর সাধারণ ক্রেতাদের চড়া মূল্য দিয়ে কুল কিনতে হচ্ছে। বাগান মালিক ও ক্রেতাদের মধ্যে কেনাবেচার পার্থক্য থাকে প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। কুল উচ্চ ফলনশীল জাতের ফল হওয়ায় শীতকালে বাজারে চাহিদা থাকে ব্যাপক। চুয়াডাঙ্গার বাজারে কুলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।

৬ বছর আগে সর্ব প্রথম চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় লোকনাথপুর গ্রামে ৯ বিঘা জমিতে সর্ব প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের কাশ্মীরি কুল চাষ শুরু হয়। এরপর জেলায় ছড়িয়ে পড়ে বলসুন্দরি, কাশ্মীরি, ভারতসুন্দরি ও টক-মিষ্টি জাতের কুল চাষ। এখানকার কুল খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি, রসালো ও সাইজে অন্য কুলের চেয়ে বড়। জেলার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩শ কুল বাগান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা রয়েছে এ জাতের কুলের। কৃষক ও উদ্যোক্তরা জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে কুল বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর ৩৮৭ হেক্টর জমির কুল বাগান থেকে প্রায় ৩০৯৬ মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ২৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭৪ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১১৮ হেক্টর জমিতে বলসুন্দরি, কাশ্মীরি, ভারতসুন্দরি ও টক-মিষ্টি জাতের কুল চাষ হচ্ছে। বলসুন্দরি জাতের কুলের চাষ সবচেয়ে জেলায় বেশি। কারণ এ কুলের উৎপাদন অনেক বেশি।

কুলগাছ লাগানোর ৭ মাস পর থেকে গাছে ফুল আসতে শুরু হয়। কুলের কাঁচা-পাকায় গায়ের রঙ সবুজ, হলদে, গাঢ় খয়েরি ও ভেতরের রঙ সাদা। প্রতি বিঘায় কুল বাগানে বছরে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে বিঘায় প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে। কুলের সাইজ বড় হওয়ায় এক কেজিতে ১৪-১৮টি হয়। এতে করে শিক্ষিত বেকার যুবকরা কুল বাগান দেখে চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ী গ্রামের কুলবাগানের মালিক শিমুল হোসেন পলক বলেন, কালীগঞ্জ বোর্ডার থেকে বলসুন্দরী ৫০০ ও ভারতসুন্দরী ২০০ চারা নিয়ে ২০২১ সালে আড়াই বিঘা জমিতে রোপণ করি। আমার জমি তৈরি করা থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চারা রোপণের ৭-৮ মাসেই গাছে কুল আসে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার কুল ও কুলের চারা বিক্রি করেছি। তিনি জানান, বলসুন্দরী কুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ভারতসুন্দরী ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিকিকিনি করছি। জেলার কৃষি উদ্যোক্তারা আমার বাগান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের আর এখন বোর্ডার বেল্টে গিয়ে চারা কেনা লাগে না।   

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কুল বাগান মালিক মজিবুল হক বলেন, আমরা কুলের দাম পাই না। আড়তদাররা আমাদের কুল বিক্রি করে এক কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেশি লাভ করে। কিন্তু আমাদের দাম দেওয়া হয় ৩০-৪০ টাকা। ফলে লাভ কম হয়, খরচ বাদে কোনো সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়।

চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ি গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল হোসেন পোলক জানান, ঢাকায় চাকরি ছেড়ে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে কৃষি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করি। সেই চিন্তা থেকে ভারতসুন্দরি ও বলসুন্দরি জাতের কুল চাষ করছি ৬ বিঘা জমিতে। বাগানের বয়স ৯ মাস। ফলন ভালো হওয়ায় বিঘায় ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হবে খরচ বাদে। কুল বাগান করতে প্রায় ৬ লাখ ঠাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া ড্রাগন, পেয়ারা ও পেঁপেসহ অন্য ফসল চাষ করছি।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কৃষক ওবাইদুল হক বাবু বলেন, ভারত থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের কুলের চারা সংগ্রহ করে চাষ করছি। লাভজনক ব্যবসা, খরচ তুলনামূলক অনেক কম। এ চাষে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে প্রতি বছর। ভালো জাত নির্বাচন করে কুল চাষ করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির আহমেদ জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় প্রায় দেড় হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কুলের আবাদ হয়েছে। কুলের বাগান লাভজনক হওয়ায় কৃষি উদ্যোক্তারা কুলের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, জেলায় ৩৮৭ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। বাজারে কুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানকার কুল চুয়াডাঙ্গায় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলায় যাচ্ছে। বাগানমালিক ও কৃষকদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০