Print Date & Time : 2 July 2025 Wednesday 9:29 am

চুয়াডাঙ্গায় বোরো ধানে ব্লাস্টের সংক্রমণে ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় বোরো ধানের ক্ষেত ব্যাপক আকারে ব্লাস্ট ছত্রাকে সংক্রমণের কবলে পড়েছে। কীটনাশক ছিটানোর পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে এবার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের খাবারের সংস্থান করা নিয়েও। এজন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ব্লাস্ট ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় চলতি বছর গম চাষ না করার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। ফলে কৃষকরা গম চাষ কম করেছেন। এছাড়া গত বছর জেলার ৬৮ হেক্টর বোরো ধানেও ব্লাস্ট দেখা দেয়। কিন্তু চলতি বছর এ বিষয়ে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে অনেক কৃষক ব্রি-২৮ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। ফলে এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ছয় হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় সাত হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় পাঁচ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমির ব্রি-২৮ ধান ব্লাস্ট ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছে।
অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জেলার চারটি উপজেলায় বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮, ৫০, ৫৮ ও ৬৩, হাইব্রিড এসিআই-১ ও ২, সিনজেনটা ১২০১ ও ১২০২ এবং এসএল-৮ এইচ জাতের ধান আবাদ করেছের চাষিরা। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪৯১ হেক্টর। কিন্তু এবার কৃষকরা জেলায় চার হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে বেশি বোরো ধানের আবাদ করেছেন।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় সাত হাজার ৬২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৩ হাজার ৪৮ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় সাত হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৩৯৬ হেক্টর থাকলেও ১৫২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান বেশি আবাদ হয়েছিল।
জেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানের মাঠে ব্রি-২৮ জাতের ধানে মাহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট। কয়েক দিন পর যে ধান ঘরে উঠবে কৃষকদের, সে ধান চোখের সামনে নষ্ট হতে দেখে অনেকে এখন দিশেহারা। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এ ধানে স্প্রে করার পরও ব্লাস্ট প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
সদর উপজেলার কৃষক আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার, আবদুর রহমান, আবদুল হামিদসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, ধান চাষ করে পরিবারের বার্ষিক খাবারের চাহিদা মেটানো হয়। এজন্য ধারকর্জ করে হলেও তারা চাষ করেছেন। কিন্তু কয়েকদিন পর যে ধান ঘরে উঠবে সে ধানের শীষে এখন শুধুই চিটা। আর জমি থেকে এ ধান সারানোও এখন বাড়তি খরচের কারণ হতে বসেছে। এজন্য প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সহায়তা করার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল হাসান জানান, এ ছত্রাক আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে দেখা যাচ্ছে। তবে কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা ও রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাঈম আস সাকীব বলেন, জেলার কিছু কিছু মাঠের ধানে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। ব্রি-২৮ জাতের ধান দেশে প্রায় ৩০ বছর ধরে চাষ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চাষ হওয়ায় এ ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গায় দিনে তাপমাত্রা বেশি ও রাতে হ্রাস পাওয়ায় ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট ছত্রাক দেখা দিয়েছে। গত বছর ব্রি-২৮ জাতের ধানের পরিবর্তে ব্রি-৫৮ জাতের ধান চাষ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তার পরও এ ধান চাষ করায় ব্লাস্ট ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।