চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো অপারেটর বদলের নীতিমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নম্বর ঠিক রেখে মোবাইল ফোন অপারেটর পরিবর্তন তথা এক সিমেই সব অপারেটরের সুবিধা বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। ফলে কোনো অপারেটরের সেবায় সন্তুষ্ট না হলে গ্রাহক তার নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। গতকাল সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সকলে এমএনপি সার্ভিসটির বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমার এ পেজে প্রশ্ন করে থাকেন- কবে আসছে এমএনপি সেবা। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করেছিলাম- বর্তমান সরকার সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে। আমরা সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করি মাত্র। এমএনপি’র ফাইলটি দীর্ঘদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল, অবশেষে অনুমোদন পেলো।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আমরা অনুমোদনের জন্য পুনরায় সংশোধিত গাইডলাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাই। তার অনুমোদনের পর আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এটি। এমএনপি সেবার জন্য সব অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বাকি আছে কেবল আনুষ্ঠানিকতা। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক পর্যায়ে এ সেবা দেওয়ার জন্য কারিগরি (টেকনিক্যাল) বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সর্বোচ্চ ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে জনগণকে তারা এ সেবা দিতে পারবে বলে আশা রাখি।’

জানা যায়, গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এমএনপি সেবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেও পরে গাইডলাইন আবারও সংশোধন করা হয়। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েস কলের নি¤œমান, গ্রাহকসেবার অসন্তুষ্টি মেটাতে এমএনপি সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এর লাইসেন্স পেতে ইচ্ছুক আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে কমিশন। সোমবার বিটিআরসি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা, শেয়ারহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণক্ষমতাসহ বিস্তারিত বিষয় ও নিয়মকানুন উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনের শেষ সময় ২৩ আগস্ট।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, নীতিমালার সংশোধিত খসড়া কোনো পরিবর্তন ছাড়াই অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজের লাইসেন্স দেওয়ার নিলাম পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় যোগ্যতার নতুন শর্ত যোগ করার উদ্যোগ নেয় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমএনপি পরিচালনার অভিজ্ঞতা, টেকনিক্যাল ও সিস্টেম ডিজাইনের অভিজ্ঞতা, গ্লোবাল ফুট প্রিন্ট, টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি, ফিন্যানশিয়াল অ্যানালাইসিস, রোল আউট ম্যানেজমেন্ট, রিস্ক ম্যানেজমেন্টসহ নয়টি মানদণ্ড ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে আগ্রহী দরদাতাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর আগ্রহীদের আবেদনের সঙ্গে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কমিটি যোগ্যতা নিরূপণ করে নম্বর দেবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে বিটিআরসি। সেই যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়েই নিলামের আয়োজন করা হবে।

এমএনপি নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক একবার এমএনপি সুবিধা নেওয়ার পর আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।  গ্রাহককে এ সুবিধা দিতে অপারেটরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে।

২০১৩ সালের ১৩ জুন বিটিআরসির দেওয়া এক নির্দেশনায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে পরবর্তী সাত মাসের মধ্যে এমএনপি চালু করতে বলা হয়। নির্দেশনায় এমএনপি চালুর জন্য তিন মাসের মধ্যে সব অপারেটরকে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে বলা হয়। কনসোর্টিয়াম পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এমএনপি সিস্টেম গড়ে তুলতে কাজ করে। বেঁধে দেওয়া সময় ২০১৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হলেও চালু হয়নি এমএনপি। পরে এমএনপি চালুর জন্য একই বছরের মে মাসে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয় বিটিআরসি। ওই কমিটিকে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি কাজের জন্য কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে আগস্ট মাসে প্রতিবেদন দেয়। সেটি ছিল অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে এমএনপি চালু করতে পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০