চোখের অ্যালার্জি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবেশে থাকা নানা অ্যালার্জেনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এতে চোখ লাল, চোখে চুলকানি, পানি ঝরা, চোখে ফোলা ভাব, পাতার গোড়ায় ফুসকুড়ি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক সময় চোখের অ্যালার্জির সঙ্গে যুগপৎ নাকের অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। একধরনের অ্যালার্জি বিশেষ মৌসুমেই শুধু যা পরিলক্ষিত হয়। পরিবেশে বিদ্যমান ধুলাবালি, অ্যানিমেল ডেন্ডার বা খসে পড়া ত্বক, গাছপালা বা ফুলের পরাগ বা রেণু ইত্যাদি অ্যালার্জেন থেকে এ ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে। এতে হঠাৎ চোখ চুলকানোর পাশাপাশি চোখ লাল ও চোখে ফোলাভাব পরিলক্ষিত হয়।
একধরনের অ্যালার্জি আছে প্রায় সারা বছরই, যা কমবেশি পরিলক্ষিত হয়। আক্রান্তদের দেহে আইজিই বেশি থাকে। এর তীব্রতার স্থায়িত্ব একটু বেশি। এতে চোখ লাল হয়, তীব্র চুলকানি হয়, চোখ মেলে তাকাতে অসুবিধা হয়, চোখ খচখচ করে। চোখের কালো অংশের চারপাশে ফুসকুড়ির মতো অথবা চোখের পাতার ভেতরের অংশে গোটা গোটা দেখা দেয়। এটি ভার্নাল কনজাংটিভাইটিস নামে অভিহিত।
আরও একধরনের অ্যালার্জি আছে। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট, ত্বকে চুলকানি, একজিমা প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি থাকলে মাঝেমধ্যে কারও চোখে এই অ্যালার্জি দেখা দেয়। বছরের যেকোনো সময় এটি হতে পারে। শৈশব ও কৈশোরেই অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব একটু বেশি থাকে। আগে থেকেই যাদের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি আছে, বিশেষ করে পারিবারিকভাবে যাদের মধ্যে অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তারা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাদের অনেকের রক্তেই বেশি মাত্রায় আইজিই থাকতে দেখা যায়।
চোখের অ্যালার্জি থেকে মুক্ত থাকতে ধুলাবালি, পশু ও পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ, বাগান পরিচর্যা প্রভৃতি থেকে বিরত থাকতে হবে। ময়লা বা পুরোনো কাপড়চোপড়, পুরোনো বইপুস্তক ও আসবাব সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে। প্রসাধনসামগ্রী, সুগন্ধি প্রভৃতি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সলিউশন ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওলোপেটাডিন বা প্রয়োজনে স্টেরয়েড-জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় বড়ি সেবন করতে হয়।
ডা. মো. ছায়েদুল হক
সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা