Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:27 pm

চোয়ালের অস্থিসন্ধির সমস্যা

খাবার চিবানো এবং মুখ খোলা, বন্ধ করা বা নড়ানোর জন্য মুখের একমাত্র যে অস্থিসন্ধি আমরা ব্যবহার করি, তাকে টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (টিএমজে) বলে। কানের সামনে মুখের দুই পাশে নিচের চোয়াল ও ওপরের চোয়ালের হাড় সংযুক্ত হয় পেশি, লিগামেন্টস ও ডিস্কের সাহায্যে বল ও সকেট তৈরির মাধ্যমে। এই অস্থিসন্ধিতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

টিএমজেতে সমস্যা হলে খাবার চিবাতে, মুখ খুলতে, বন্ধ করতে বা নাড়াতে, হাই তুলতে ও কথা বলতে কচকচ বা টিকটিক অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে এবং কানের সামনে মুখের দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চিকিৎসা না করালে একপর্যায়ে মুখ খোলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক সময় হাই তুললে বা বড় করে মুখ হাঁ করলে মুখ আটকে যেতে পারে। ঘুমের সমস্যা, হতাশা, মাথাব্যথা ও কানব্যথাও হতে পারে।

যাদের নিজের অজান্তেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস আছে, তাদের এ সমস্যা হতে পারে। অনেকে রেগে গেলে, দুশ্চিন্তায় বা ঘুমের মধ্যে দাঁতে দাঁত ঘষে। এতে অস্বাভাবিক চাপে টিএমজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এমন অভ্যাস থাকলে দন্ত বিশেষজ্ঞের পরমার্শ নেয়া জরুরি। দাঁত দিয়ে পেনসিল বা শক্ত কিছু চিবানোর বদভ্যাস থেকেও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।

ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে হাড় ক্ষয় হতে পারে। ফলে জয়েন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে। মুখ বন্ধ করলে ওপরের ও নিচের পাটির দাঁত একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হয়। এর তারতম্য হলেই নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কৃত্রিম দাঁত সংযোজনের সময়ও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যাদের একদিকের দাঁত দিয়েই সব সময় খাবার চিবানোর অভ্যাস, অথবা যাদের একদিকের দাঁত নেই, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে চোয়ালের দুই পাশ থেকেই চিবানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে টিএমজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

দুর্ঘটনায় বা অন্য কোনো কারণে মুখে আঘাত লাগলে এই অস্থিসন্ধিতে সমস্যা হতে পারে। যারা দীর্ঘ সময় কান ও কাঁধের মধ্যে ফোন চেপে বাঁকা হয়ে কথা বলেন, তাদের এ সমস্যা হতে পারে। গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর সময় অনেকেই এভাবে কথা বলেন। দীর্ঘ সময় মাথা ঝুঁকে কম্পিউটারে বা অন্য কোনো কাজ করলেও এই অস্থিসন্ধিতে সমস্যা হতে পারে।

টিএমজে সমস্যা জটিল হয়ে উঠলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়তে পারে। কাজেই সমস্যার শুরুতেই দ্রুত দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমেই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করতে হবে।

মো. আসাফুজ্জোহা

দন্ত বিশেষজ্ঞ