চৌগাছায় সিটিগোল্ডের গহনা তৈরিতে অর্ধশত নারীর কর্মসংস্থান

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরের চৌগাছা পৌরসভার গ্রাম কুঠিপাড়া। ব্রিটিশ শাসনামলে আরাম-আয়েশের অন্যতম স্থান ছিল এ কুঠিপাড়া। এ গ্রামের গৃহবধূ শিউলী খাতুন। সংসারের সব কাজ সামলে ব্যস্ত থাকেন গহনা তৈরির কারখানায়। এখানে যা রোজগার করেন তার পুরোটাই তুলে দেন পরিবারের কর্তার হাতে। শিউলি খাতুনের মতো স্বপ্না বেগম, রিনা খাতুন, জোসনা খাতুন, রেকসোনা খাতুন ও চায়না বেগমসহ কুঠিপাড়ার অন্তত অর্ধশত নারী বছরের পর বছর সিটি গোল্ডের গহনা তৈরি করে এভাবে রোজগার করছেন।

এখানকার বাসিন্দা এ ব্যবসার মূল মালিক ইকবাল হোসেন একসময় কৃষিকাজসহ নানা ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় এক যুগ আগে তিনি সিটি গোল্ডের গহনা তৈরির কথা মনস্থির করেন। এজন্য কোনো প্রশিক্ষণ বা কারও সহযোগিতা লাগেনি। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন সিটিগোল্ডের গহনা তৈরির মিনি কারখানা। শুরুতে অল্পসংখ্যক কারিগর দিয়ে গহনা তৈরি শুরু করেন। কিন্তু তার কারখানায় বর্তমানে অর্ধশত নারী কাজ করছেন। তাদের সবাইকে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক দেন। কারখানা থেকে যা রোজগার হয় তাতে মোটামুটি চলে ইকবাল হোসেনের সংসার। কিন্তু বর্তমানে কাঁচা পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ ব্যবসায় এখন মন্দাভাব, এ কথা জানালেন তিনি।

সম্প্রতি সিটিগোল্ড গহনা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, মহল্লার নারীরা পরিবারের কাজ শেষ করে সকালে গহনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বাড়ির আঙিনায় ছোট ঘর তৈরি করে প্রতিটি ঘরে তিন-চারজন করে নারী বসে তৈরি করছেন নানা ধরনের গহনা। এর মধ্যে কানের দুল, নাকফুল, কণ্ঠচিক, সিতাহার, চুড়ি ও কাটা টিকলি উল্লেখযোগ্য।

সরষের দানার মতো ছোট দানা একত্র করে তৈরি করা হচ্ছে একটি গহনা। সেটি আগুনে ভালোভাবে পুড়িয়ে আবার পানিতে ভেজানোর পর ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে একটি গহনা। কাজটি দেখতে যতটা সহজ, তৈরি করা সেক্ষেত্রে বেশ কঠিন জানান কারিগররা।

গহনা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করা কারিগর স্বপ্না বেগম, রিনা খাতুন, শিউলী বেগম, জোসনা খাতুন, রেকসোনা খাতুন, চায়না বেগম ও মিনু খাতুন বলেন, আমরা সংসারের কাজ করার পাশাপাশি এখানে গহনা তৈরি করি। নিজেদের বাড়ির পাশে কাজ হয়। সেখানে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কারখানা মালিক গহনা তৈরির সব পণ্য এনে দেন, আমরা যা একত্রিত করে একেকটি গহনা তৈরি করি। এখান থেকে মাসে যা রোজগার হয়, তা আমাদের সংসারের

কাজে ব্যয় করি।

তারা আরও বলেন, সকালে সংসারের কাজ করে দুপুর পর্যন্ত বসে সময় পার করতাম। আবার দুপুরে রান্নাসহ অন্যান্য কাজ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত একইভাবে পার হতো। সেই সময়ে আমরা এই গহনার কাজ করি।

ইকবাল হোসেন জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারে জš§, সেভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি। একসময় কৃষিকাজসহ ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতাম। এক নিকট আত্মীয়র

মাধ্যমে সিটি গোল্ড গহনার গল্প শুনে কাজ শুরু করি। প্রায় এক যুগ ধরে ব্যবসা করছি, তবে বর্তমানে ব্যবসায় বেশ মন্দাভাব যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ গহনা তৈরির পণ্যের

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু গহনার দাম বাড়েনি।

একটি গহনা তৈরি করে তা বাজারে বিক্রির পর সব খরচ বাদ দিয়ে তার দুই থেকে পাঁচ টাকা আয় হয়, এতেই তিনি ও তার কারিগররা খুশি। তার কারখানায় তৈরি গহনা জেলা শহর যশোর ও রাজধানীতে বিক্রি হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০