প্রতিনিধি, যশোর: গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়েছেন যশোরের চৌগাছার চাষিরা। ভারী বর্ষণের কারণে বিঘার পর বিঘা জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে থৈথৈ করছে; পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সবজিসহ উঠতি ফসল। সরকারি হিসেবে ধানসহ প্রায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বেশি বলে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, সবজি ২০০ হেক্টর, মরিচসহ অন্যান্য ৮০ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ১২ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। তবে কৃষকরা বলছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে এর পরিমাণ আরও বেশি।
গতকাল উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিঘার পর বিঘা জমির রোপা আমন পানির নিচে। কৃষক ধান ক্ষেতের আইলে বসে ডুবে যাওয়া ধানের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন। এ সময় কথা হয় কৃষক আহাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পাঁচনামনার এই বিলে তার দুই বিঘা ধান ছিল। কিছুটা আগে লাগানোর কারণে প্রতিটি ধান দেখার মতো হয়েছিল। কিন্তু একটানা বৃষ্টির কারণে ধান পানির নিচে ডুবে আছে। বিলের পানি বের হওয়ার কোনোই পথ নেই; সে কারণে ধান পচে গলে নষ্ট হতে শুরু করেছে। ওই বিলে কৃষক সাহিদুল ইসলাম ৭ বিঘা, জালাল উদ্দিন দেড় বিঘা, লোকমান হোসেন ৮ বিঘা, তাহাজ্জত হোসেন ৩ বিঘা, রোকন উদ্দিন ১ বিঘা, বিল্লাল হোসেন ২ বিঘা, শুকুর আলী ৪ বিঘাসহ বহু কৃষকের বিঘার পর বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে আছে।
এদিকে বৃষ্টিতে সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাঁচনামনা বেড়বাড়ি মাঠে কৃষক ফুলজার হোসেন ১ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেন। আর দুই সপ্তাহ পরই কৃষক তার মুলা বাজারজাত করতে পারতেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তার সব মুলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক ফুলজার বলেন, এক বিঘা জমিতে তার এ পর্যন্ত ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই সপ্তাহ পরই মুলা বিক্রির উপযোগী হতো কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ। মুলা চাষ করে এক বুক আশা নিয়ে মনের সুখে ক্ষেত পরিচর্যা করতেন তিনি কিন্তু বৃষ্টিতে তার সব স্বপ্ন ভেসে গেছে। এখন জমি চাষযোগ্য হলে সেখানে ভুট্টার চাষ করবেন বলে তিনি মনস্থির করেছেন। কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে জোরে বাতাস বয়ে গেছে। এর ফলে মাচার চাষ করা পটোল ও কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কষ্টসাধ্য।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, শত শত বিঘার ধান এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার রোদ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁচামরিচের গাছ, পটোল, মুলা, বাঁধা ও ফুলকপির গাছ মারা যেতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, একটানা বৃষ্টিতে কৃষকের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নির্ণয় করা যায়নি; তবে ধানসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।