চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি

ক্রীড়া ডেস্ক: জার্মানি যেন ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালকেই মনে করিয়ে দিলো! তিন বছর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছিল জার্মানরা। রোববার রাতে কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে চিলিকেও একই ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টের মুকুট জয় করে জোয়াকিম লো’র দল। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জার্মানিকে নিয়ে ততটা আলোচনাই ছিল না। ম্যানুয়েল নয়ার, জেরোমি বোয়েটাং, স্যামি খেদিরা, মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস ও থমাস মুলারদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখেই রাশিয়ায় এসেছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গত পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেসতোভেস্কি স্টেডিয়ামে সেই দলটিই শিরোপা উৎসব করে। তারকা খেলোয়াড়দের ছাড়াই ইউরোপিয়ান, এশিয়ান, আফ্রিকান, দক্ষিণ আফ্রিকান ও কনকা কাপ চ্যাম্পিয়নদের টপকে শিরোপা জয় করে লো’র দল।

ফাইনালের হারটি চিলিকে অনেক দিন পোড়াবে, যারা গ্যালারিতে ছিলেন কিংবা টিভি পর্দায় চোখ রেখেছেন তারা বলতেই পারেন- খেলেছে চিলি আর শিরোপা জিতেছে জার্মানি। গোটা ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়ে ৬১ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল চিলিয়ানরা। কিন্তু এক হাস্যকর ভুলই তাদের শিরোপার স্বপ্ন চূর্ণ করে দেয়।

১৯তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো চিলি। ২০ গজ দূর থেকে আর্তুরো ভিদালের বুলেটগতির শট রুখে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি জার্মান গোলরক্ষক মার্ক টের স্টেগেন। ফিরতি বলে গোলমুখে থাকা অ্যালেক্সিস সানচেজ বল পাঠিয়ে দেন সীমানার বাইরে। পরের মিনিটেই হাস্যকর ভুলে হƒদয় ভাঙা শুরু চিলির। চিলিয়ানদের আক্রমণ ঠেকিয়ে দ্রুতই পাল্টা আক্রমণে যায় জার্মানি। অবশ্য বল নিয়ন্ত্রণে নিতে সময় নেয়নি চিলি। ঠিক তখনই মার্সেলো দিয়াজের ভুলে গোল হজম করে বসে চিলিয়ানরা।

নিজেদের বক্সের কাছাকাছি বল টার্ন করতে গিয়েছিলেন দিয়াজ। তবে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে এসে সেল্টা ভিগোর চিলিয়ান খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল দখলে নেন টিমো ওয়ার্নার। বক্সে ঢুকে চিলির গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোকে গোলপোস্ট থেকে বের করে আনেন ওয়ার্নার এবং দারুণ বুদ্ধিমত্তায় ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা স্টিন্ডলকে পাস বাড়ান। স্টিন্ডলের আলতো টোকা জালে আশ্রয় নিলে উৎসবে মেতে ওঠে জার্মানি।

পিছিয়ে পড়লেও মানসিক দৃঢ়তা দেখায় চিলি। সমতায় ফেরার জন্য একের পর এক জার্মান শিবিরে আক্রমণ করেন ভিদাল-সানচেজরা। চিলির শক্তিশালী আক্রমণভাগের কথা মাথায় রেখে রক্ষণকে শক্তিশালী করেন লো। তার সেই কৌশলের কাছেই ‘মার’ খেয়ে যায় চিলিয়ানরা। বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানিয়েও জার্মানির রক্ষণদুর্গ ভেদ করতে পারেননি ভিদালরা। খেলা শেষের বাঁশি ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জার্মানির উৎসবের আমেজে হƒদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় দুর্দান্ত খেলতে থাকা চিলির।

ফাইনালে খেলতে নামা জার্মানির স্কোয়াডের গড় বয়স ছিল মাত্র ২৪। অধিনায়ক ড্রাক্সলারের বয়সও ২৩। এমন একটি অনভিজ্ঞ দল নিয়ে শিরোপা জিততে পারায় বেশ উচ্ছ্বসিত জার্মান কোচ লো, ‘আমি এ দলটি নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। কেননা, তারা মাত্র সাড়ে তিন সপ্তাহ একসঙ্গে ছিল। তরুণ একটি দল নিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাটা ঐতিহাসিক অর্জন। এটি জার্মানির ইতিহাসে অনন্য; অসাধারণ।’

দিয়াজের ভুলকে বড় করে দেখছেন না চিলির তারকা ফরোয়ার্ড ভিদাল। এটিকে খেলার অংশ হিসেবেই দেখছেন এ বায়ার্ন স্ট্রাইকার, ‘এ ধরনের ভুল হতেই পারে। এটিকে নিয়ে মাতম করার কিছুই নেই। আমি মনে করি আমাদের দলটি একটি পরিবারের মতো এবং আমরা যখন জিতি তখন জয়টা সবারই হয়। ভুলটা নিয়ে মাতম করা কিছুই নেই কারণ আমরা প্রথম দিন থেকেই লড়াই করেছি। আমরা আরেকটি ফাইনালে উঠতে পারায় আনন্দিত। আশা করি আমরা সাফল্যের এ ক্ষুধা ধরে রাখতে পারবো।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০