ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাহাঙ্গীরনগরের মতো দেশের সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ‘সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ‘ইরর স্কোয়াড বাংলাদেশ’ দল। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যরা হলেন প্রিয়াল ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ ও তাসদির আহমেদ।
অ্যাডভান্স টেকনোলজি বিডির আয়োজনে সম্প্রতি রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হয়েছে ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশেন, সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (ইউসিএএসএম) দল মিনজুরুল ইসলাম, রাফিন হোসেন ও সাবিত শাফির দল ‘ফ্রগ হান্টার’। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) মেহেদি হাসান মিরাজ, আসাদুজ্জামান আসাদ ও সানজিদার দল ‘সাইবার নাট্স’ এবং নারী দল হিসেবে বিজয়ী হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের দল ‘ইউএপি মিস্টিক্যাল৬’। দলের সদস্যরা হলেন সামিয়া হক, আনিকা তাবাসসুম ও জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের প্রত্যেকের জন্য ল্যাপটপ, প্রথম রানার্সআপ দলের জন্য স্মার্টফোন এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ দলের জন্য পুরস্কার হিসেবে ট্যাবলেট পিসিসহ ক্রেস্ট, রিভ এন্টিভাইরাস এবং সনদপত্র দেওয়া হয়। বিজয়ী নারী দলকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া বিজয়ী দলগুলোর সদস্যরা দেশের শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করার সুযোগ পাবেন।
সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, আইএসপিএবি সভাপতি এমএ হাকিম, ড্যাফোডিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভুঁইয়া, ডলফিন কম্পিউটারস লিমিটেডের পরিচালক (মার্কেটিং ও অপারেশন্স) মনোয়ারুল ইসলাম, পাঠাও’র হেড অব প্ল্যাটফর্ম এবং ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং সাফকাত আসিফ, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) পরিচালক (বিপণন) মুজাহিদ আলবিরুনী সুজন, আইপে’র হেড অব বিজনেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি মো. আবুল খায়ের চৌধুরী, সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক আবদুর রহমান শাওন প্রমুখ।
‘বি দ্য আলটিমেট সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট’ সেøাগানে প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্বে সর্বোচ্চ তিন সদস্যের দল গঠনের মাধ্যমে দু’শতাধিক টিম নিবন্ধন করে। গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে উদ্বোধনের পর দেশের আরও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাক্টিভেশন কার্যক্রম চলে। এরপর অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আয়োজনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা ৪০টি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। বাছাইকৃত দলগুলো চূড়ান্ত আয়োজনে সকালে তিন ঘণ্টাব্যাপী ‘ওয়েব ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট’ বিষয়ে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। দেশের শীর্ষ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের ১০ জনের একটি দল বিচারকার্য মূল্যায়ন করে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ও সাইবার সিকিউরিটি’ বিষয়ে প্যানেল ডিসকাশন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্মার্ট টেকনোলজিস বিডির এজিএম ও সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান মো. মিরশাদ হোসেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটির (বিডব্লিউআইটি) সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানা খান, আইপে’র হেড অব বিজনেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি মো. আবুল খায়ের চৌধুরী, রাইট টাইমসের প্রধান নির্বাহী ও সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ তৌহিদুর রহমান ভূঁইয়া। এরপর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণীপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সাইবার সিকিউরিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের তরুণদের যোগ্যতা রয়েছে। আশা করছি, এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাইবার সিকিউরিটিতে আরও দক্ষ তরুণ কর্মী উঠে আসবে।
বেসিস সভাপতি আলমাস কবীর তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ব যত ডিজিটাল হবে, সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব তত বাড়তে থাকবে। সাইবার সিকিউরিটিতে আমাদের দারুণ সুযোগ রয়েছে। আমাদের যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এখন যেমন তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব হ্যাকারদের প্রসঙ্গ বললে রাশিয়া কিংবা চীনের কথা বলে, তেমনি সাইবার সিকিউরিটির কথা বললে যেন বাংলাদেশের কথা বলে। বাংলাদেশ যেন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের দেশ হিসেবে পরিচিত হয়Ñএ লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমরা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ হতে পারব।
প্রতিযোগিতার পাওয়ার্ড বাই স্পন্সর ছিল জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠাও’। এছাড়া কো-স্পনসর ছিল আইপে, এসসিএসএল, ক্যাস্পারস্কি ও মেট্রোনেট। আর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে বেসিস, আইএসপিএবি, বাক্য ও বিডিওএসএন। প্রতিযোগিতার সহযোগী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (সিএসসি)। সিকিউরিটি পার্টনার রিভ এন্টিভাইরাস এবং মিডিয়া সহযোগী কনসিটো পিআর ও ঢাকা লাইভগ।