নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের সংকট ও দাম বৃদ্ধি, ধারাবাহিক রিজার্ভের পতন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এই চাপ মোকাবিলায় ভারসাম্যমূলক সতর্ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আগামী মুদ্রানীতির ওপর মতামত নিতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে নির্বাহী পরিচালকদের একটি সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
জানা যায়, সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজস্ব নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ভারসাম্যমূলক সতর্ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের ওপর জোর দেন নির্বাহী পরিচালকরা। এ সময় একজন নির্বাহী পরিচালক তার মতামতে বলেন, দেশে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন পরিমাণ বাড়ায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে না। ফলে বাজেটে প্রক্ষেপিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে আগামীতে ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতিই অধিক ফলপ্রসূ হবে।
আরেকজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও থামেনি। ফলে আগামীতেও বৈশ্বিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ থাকবে। এগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা জরুরি। সভায় মুদ্রানীতি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কভিড থেকে শুরু করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে যত ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, তার সবই ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। কোনোটাই তীব্র প্রভাব ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, আগেও রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি সমন্বয় করে আমরা জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এবারও সেরকম পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ মুদ্রানীতি এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে, যাতে কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হয়, আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। এ কারণে মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা ভারসাম্যমূলক ও সতর্ক করা হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তগুলোর অন্যতম হলো ব্যাংকের সুদহার নির্দিষ্ট করে না রেখে করিডর প্রথা চালু করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কাঠামোয় সুদহারের করিডর প্রথা চালুর সুপারিশ করেছে দাতা
সংস্থাটি। সে অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের প্রথম ষাণ¥াসিক থেকে মুদ্রানীতিতে সুদহারের করিডর প্রথা চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটা হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের বিতরণ করা ঋণের সুদহার। একে রেফারেন্স রেটসহ করিডর বলা হবে। অপরটি হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দেয়া-নেয়ার সুদহার। একে বলা হবে পলিসি রেটসহ করিডর, যা মুদ্রানীতি পরিচালনার টুলস হিসেবে ব্যবহার হবে।