শেয়ার বিজ ডেস্ক: উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়। তার মানে এই নয় যে, পাকিস্তানের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। বরং দেশটির অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে জানান অর্থনীতিবিদরা। খবর: ডন।
১ জুলাই চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার পর ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির ১৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। মূলত ঋণের কারণে রুপির এই পতন হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বিভিন্ন বৈদেশিক সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে দুই হাজার কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। রুপির দুর্বল অবস্থান আমদানিনির্ভর পাকিস্তানকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে। কেননা দেশটিকে শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) জানায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। জ্বালানি তেল, খাদ্য ও সারের মূল্যবৃদ্ধি পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তাই রপ্তানির তুলনায় আমদানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের পণ্যদ্রব্যে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। অর্থাৎ তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে, এর আগের অর্থবছরের একই সময় যা ছিল এক হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এ হিসাবে পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আমদানি বিল বেড়ে যাওয়ায় এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এ সময় আমদানি বিল বাড়ে ৫৫ শতাংশ (পাঁচ হাজার দুই কোটি ডলার) এবং বাণিজ্য বাড়ে ২৬ শতাংশ বা দুই হাজার ৫০ কোটি ডলার।
এজন্য দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানি খাত স্থিতিশীল থাকাকে ক্রীড়নক মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, বড় আকারের শিল্পকারখানার মধ্যে কাঠজাতীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়ে (১৭২ দশমিক ২ শতাংশ) এ সময়। সবচেয়ে কম বাড়ে ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের উৎপাদন (৩ দশমিক ৬ শতাংশ)। এছাড়া বস্ত্র খাতে (১ দশমিক ৪ শতাংশ), খাদ্য, পানীয় ও তামাক খাতে (৫ দশমিক ৩ শতাংশ), লোহা ও স্টিল খাতে (২২ দশমিক ৮ শতাংশ), অটোমোবাইলে (৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ), পেপার ও বোর্ডে (৮ দশমিক ২ শতাংশ), কেমিক্যালে (৬ দশমিক ৭ শতাংশ) ও চামড়াজাত পণ্যে বাড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। সবমিলিয়ে বড় আকারের শিল্পকারখানার উৎপাদন চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ে। এ অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুন পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর আগের মাসের তুলনায় এ খাতের উৎপাদন বাড়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালের জানুয়ারির তুলনায় বাড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকা নির্ভর করছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশটি শাসন করুক বা না-ই করুক, স্বল্পমেয়াদে শিল্প খাতেও রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাকিস্তানে ক্ষুদ্রশিল্পের উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়মিত প্রকাশ করা হয় না। তবু বড় আকারের শিল্পকারখানা, কৃষি, সেবাখাতসহ স্ট্রিট অর্থনীতির উৎপাদনের ধারা থেকে ধারণা নেয়া হচ্ছে, ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদনও বাড়বে। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) মতে, পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য বেড়েছে চলতি অর্থবছরে। যোগাযোগ, অর্থ ও বিমা খাতসহ সরকারের সেবার মান বেড়েছে। কৃষি খাতও ভালো অবস্থানে রয়েছেÑপ্রধান পাঁচটি শস্যের মধ্যে তুলা, ধান ও আখের উৎপাদন বেড়েছে। ভুট্টার উৎপাদন গত বছরের মতো রয়ে গেছে। শুধু গমের উৎপাদন প্রত্যাশার তুলনায় কমেছে।