চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ১৬% সিগারেট থেকে বেশি আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাট আহরণে এবার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১৮ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ভ্যাটের চূড়ান্ত হিসেবে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

হিসাব অনুযায়ী, পূর্ববর্তী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় হয়েছে। অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এর আগের বছরে আহরণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। জুনে ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষণীয়। চলতি বছরের জুনে আহরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, আগের বছরের জুনে এ আদায় ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। জুনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এনবিআরের হিসাবমতে, এনবিআরের ভ্যাট উইংয়ের মাঠ পর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮ দশমকি ৭১ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এই কমিশনারেটের মোট আহরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের মতে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। গত অর্থবছরে ভোজ্যতেলসহ কতিপয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়। ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এনবিআরের ভ্যাটের ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বিশাল অর্জন হিসেবে মনে করা হয়। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটি মূল কারণে। প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা; দ্বিতীয়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ-উৎপাদসহ হালনাগাদকরণ জোরদার এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে। এ আইটেমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। কয়েকটি আইটেমে প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে এমএস রড ৫৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কোমল পানীয় ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিমেন্ট ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

অন্যদিকে প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভালো করেছে। এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়। মিষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ; আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। রেস্টুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ এ কমিয়ে আনা হয়। তা সত্ত্বেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে। ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ, যা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যসম্পাদন মানদণ্ড অনুযায়ী ‘অসাধারণ’।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০