Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:51 am

ছয় বছরে ইস্যু আনতে ব্যর্থ ৫০ শতাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে কাজ করে মার্চেন্ট ব্যাংক। এছাড়া নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রাহকদের পক্ষে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং আন্ডার রাইটিংয়ের কাজও করে মার্চেন্ট ব্যাংক। কিন্তু নিজেদের এ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। কারণ বড় কিছু মার্চেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ছোট মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো।

বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৫৯টি। গত পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে নতুন ইস্যু আনতে ব্যর্থ হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক। অর্থাৎ যে পরিমাণ মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, সে অনুযায়ী তারা নতুন ইস্যু আনতে পারছে না। গত বছরও এ চিত্র বহাল ছিল। ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ১৩টি কোম্পানি ও একটি মিউচুয়াল ফান্ড। চলতি বছর এখন পর্যন্ত নয়টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানিগুলো গুটিকয়েক মার্চেন্ট ব্যাংকে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে বেছে নিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানকে। ফলে ছোট মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ফলে এসব মার্র্চেন্ট ব্যাংক বাজারে কোম্পানি আনতে ব্যর্থ হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) শাকিল রিজভী বলেন, একটি কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে আসে, তখন তারা ভালো ইস্যু ম্যানেজার খুঁজে। সে কারণে ছোট ছোট মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। তাছাড়া ব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়া সহজলভ্য হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ কোম্পানি আসার কথা সেই পরিমাণ কোম্পানি আসছে না। ফলে ইস্যু আনতে পারছে না সব মার্চেন্ট ব্যাংক।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মার্চেন্ট ব্যাংক পুঁজিবাজারে ইস্যু আনতে ব্যর্থ হচ্ছে এ কথা সত্যি। তবে এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। অনেকে ইস্যু আনার জন্য চেষ্টাও করছে, কিন্তু কোম্পানির সমস্যা থাকায় বিএসইসির অনুমোদন মিলছে না। এ কারণে তারা ইস্যু আনতে ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসতে হলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অনেক ধরনের লিয়াজোঁর দরকার হয়, যেটা অনেকেই করতে পারে না। এ কারণে তারা পিছিয়ে যায়। তাছাড়া যারা বাজারে আসতে যাচ্ছে, তাদের পছন্দ থাকে বড় বড় মার্চেন্ট ব্যাংক। ফলে ছোট মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

অন্যদিকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, সেই পরিমাণ কোম্পানি প্রতি বছর বাজারে আনা সম্ভব নয়। এ বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। তবে যদি নিয়ম করে দেওয়া হয় বছরে একটি মার্চেন্ট ব্যাংক তিনটির বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে পারবে না, তাহলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ছয় বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি কোম্পানি বাজারে আনতে সক্ষম হয়। এ বছর মোট ২০টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরের তিন বছর ধারাবাহিকভাবে কোম্পানির তালিকাভুক্তি কমে। ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হয় ১৬টি প্রতিষ্ঠান। আর ২০১৬ সালে তা কমে হয় ১১টি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে কোম্পানির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় আটটিতে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তা কিছুটা বেড়ে হয় ১৪টি।

এদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে একটি আইপিও আনতে দেড় থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। আর ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও আনতে অন্তত সাত-আট মাস সময় লাগে। মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, সময় বেশি লাগায় ভালো কোম্পানি আসে না। ফলে আইপিওর সাইজ কম হয়। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এ খাতে আয় কম হয়। তাই তারা আইপিও আনার কাজ করতে চায় না।

প্রসঙ্গত, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার বিধিমালা, ১৯৯৬-এর অধীনে নিবন্ধিত ও পরিচালিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হলো বাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির কাজ করা, নিজস্ব পোর্টফোলিও বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রাহকদের পক্ষে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং আন্ডার রাইটিংয়ের কাজ করা। নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির কাজ করতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যাপক অনাগ্রহের কারণে বিএসইসি’কে ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট বিধিমালার ৭-এর উপবিধি ৩-এর (খ) সংশোধন করে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রতি দুই পঞ্জিকা বছরে অন্তত একটি পাবলিক ইস্যু বাজারে আনতে হবে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে তাদেরই চায়, যাদের সেবা ভালো। সেবার কোয়ালিটি ভালো না থাকলে কোম্পানিগুলো তাদের গুরুত্ব কম দেয়।’ তিনি বলেন, ‘সেবাপ্রদান, কোয়ালিটি মেইনটেইন ও ব্র্যান্ড ভ্যালু বিচার করে ইস্যু ম্যানেজার ঠিক করে কেম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে আমাদের দেশে কিছু নামমাত্র মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, যার দরকার নেই।’