পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

ছয় বছরে পরামর্শক ব্যয় বেড়ে ছয়গুণ!

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে রেলপথ। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইশেষে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) চূড়ান্ত করা হয় ২০১৫ সালে। আর প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয় ২০১৬ সালে। তবে পাঁচ বছরে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হয়েছে অর্ধেকেরও কম। যদিও প্রকল্পটির পরামর্শক ব্যয় বেড়েই চলেছে।

তথ্যমতে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ১ম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয় ২০১৮ সালে। সে সময় প্রকল্পটির পরামর্শক ব্যয় ধরা হয় ৯৪০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বর্তমানে এ ব্যয়টাই বহাল আছে এখনও। আর ২০১৬ সালে মূল ডিপিপি অনুমোদনকালে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

যদিও নতুন হিসাবে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৪০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। তবে সম্ভাব্যতা যাচাইশেষে ২০১৫ সালে এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরে পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়ে প্রায় ছয়গুণ হয়ে যাচ্ছে।

সূত্রমতে, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে মাওয়া ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। এতে পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি রেলপথটি নির্মাণে ডিজাইন রিভিউ টিমেও পরিবর্তন আনা হয়। বেড়েছে পরামর্শকদের বেতন-ভাতা। এতে বেড়ে যাচ্ছে পদ্মা রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়।

সম্প্রতি রাজধানীর রেলভবনে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির পিআইসি কমিটির চতুর্থ সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে জানানো হয়, অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। এ সময় প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের তথ্যমতে, প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। যদিও পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্তই রয়েছে। তাই পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

এদিকে কভিডের কারণে দেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রথম দফা লকডাউন ছিল। আবার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে চলতি বছর ১৪ এপ্রিল থেকে ১১ আগস্ট লকডাউন ছিল। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় চুক্তির শর্তানুসারে নির্মাণকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে। তাই পরামর্শকের মেয়াদও বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়ছে।

এর বাইরে পরামর্শক কর্তৃক প্রথম ১৮ মাসের মধ্যে সব ডিজাউন দাখিল করার কথা ছিল। এজন্য ডিজাইন রিভিউ টিমের জনমাস কম ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ভেরিয়েশন ও সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে রেলপথটির নকশা পরিবর্তনের কারণে কাজের পরিধি ও ধরন পরিবর্তন হয়েছে। ফলে নতুন পদ সৃষ্টিসহ জনমাস বাড়াতে হয়েছে। আবার পুরোনোদের বেতন-ভাতাও বেড়েছে। এতে পরামশর্ক খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। অথচ পরামর্শক খাতে বাড়তি কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই।

বৈঠকে এ প্রসঙ্গে জানানো হয়, সংশোধিত ডিপিপিতে পরামর্শক খাতের জন্য মোট ব্যয় ধরা আছে ৯৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত ডিপিপিতে ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি (ভৌত সমন্বয়) বাবদ ৩৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং প্রাইস কনটিনজেন্সি (মূল্য সমন্বয়) খাতে ৫২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। এখান থেকেই পরামর্শক খাতের অতিরিক্ত ব্যয় আপাতত সমন্বয় করা যাবে।

এদিকে নির্মাণকাজের ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। সেখানে পরামর্শকের আইটেমভিত্তিক হ্রাস/বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত ও ব্যয় সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরামর্শক কাজে বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে। আবার কভিডের কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হওয়ায় চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে পরামর্শক নিয়োগ ব্যয় বাড়ছে।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদনকালে নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এক দফা বাড়ানোর পর তা দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চীন। দেশটির এক্সিম ব্যাংক থেকে কঠিন শর্তে এ ঋণ (বায়ার্স ক্রেডিট) নেয়া হচ্ছে। বাকি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বাড়ায় রেলপথটির নির্মাণব্যয় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির নকশা জটিলতার কারণে রেলপথ নির্মাণব্যয় আরও বাড়বে। এর বাইরে বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণেও প্রকল্প ব্যয় বাড়বে। পরামর্শক নিয়োগের বাড়তি ব্যয়ও সে সময় সংশোধিত ডিপিপিতে যুক্ত করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০