ছয় মাসে ৫০০ কোটি ডলার দরকার শ্রীলঙ্কার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান ধরে রাখার জন্য আগামী ছয় মাসে শ্রীলঙ্কার দরকার ৫০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে জ্বালানি আমদানির জন্য দরকার অন্তত ৩৩০ কোটি ডলার। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আরও ১০০ কোটি ডলার চায় দেশটি। গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৮১ কোটি ডলারে। খবর: রয়টার্স।

নগদ অর্থের সংকটে থাকা সরকারের অন্তত ৫০০ কোটি ডলার দরকার বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাই যথেষ্ট নয়, আমাদের পুরো অর্থনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী বাজেট প্রণয়নের জন্য কাজ করছেন তিনি। গত মাসে ক্ষমতায় আসা শ্রীলঙ্কার এই নতুন প্রধানমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়াতে শুল্কহার বাড়িয়েছেন। আসন্ন অন্তর্বর্তী বাজেটে কঠোরভাবে ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার।

বিদেশি মুদ্রা ঘাটতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতীতে নেয়া ঋণ পুনর্গঠনের চেষ্টার পাশাপাশি নতুন ঋণ খুঁজছে দেশটির সরকার। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র জানান, সার কিনতে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ৫৫ লাখ ডলার ঋণ নেয়ার প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা সায় দিয়েছে।

দেশটির মোট অধিবাসী সোয়া দুই কোটি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর গত সাত দশকে কখনও এত ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েনি শ্রীলঙ্কা। কভিড-১৯ মহামারির প্রভাব, সরকারি তহবিল পরিচালনায় অদক্ষতা এবং শুল্ক কমানোয় ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি দেশটিতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এসেছে। নজিরবিহীন এই সংকট ঘিরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন দেশটির জনগণ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শুরুতে আর্থিক সহায়তা পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। এছাড়া তারা আরও কয়েকটি দেশ ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বহুজাতিক সংস্থার কাছেও আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বিক্রমাসিংহের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং চলতি মাসের শেষের দিকে তা শেষ হবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী। বিক্রমাসিংহে বলেন, যেকোনো ধরনের স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন নির্ভর করছে শ্রীলঙ্কা ও আইএমএফের একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ওপর।

ভারত এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ১৯০ কোটি ডলার দিয়েছে। জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানির জন্য আরও ১৫০ কোটি ডলারের তহবিল পেতে দিল্লির সঙ্গে কথা বলছে কলম্বো। এছাড়া চীন ঋণ পুনর্গঠনে সহায়তার কথা জানায়। চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের একটি সিন্ডিকেটেড ঋণ পাওয়ার জন্যও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। জাপানের কাছেও সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে ২০২০ সালে কলম্বো ১৫০ কোটি ডলারের একটি রেলওয়ে প্রকল্প বাতিলের পর থেকে টোকিওর সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। ওই প্রকল্পে বেশিরভাগ অর্থায়ন করার কথা ছিল জাপানের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জাপানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক ভেঙে গেছে। সেটি মেরামত করতে ও জাপানিদের আস্থা ফিরে পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

এর আগে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি জানান, জরুরি ভিত্তিতে তিন বিলিয়ন ডলার (৩০০ কোটি ডলার) বৈদেশিক ঋণ দরকার। তেল, বিদ্যুৎ ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই অর্থ প্রয়োজন বলে জানান তিনি। শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠন করতে চায় বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, জুলাইয়ে বন্ডের এক বিলিয়ন ঋণ শোধের ওপর একটি স্থগিতাদেশ চাইবে দেশটি। এ জন্য বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০