ছাগলকাণ্ডে সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন ও তৌহিদুল আলম জেনিথসহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ এ মামলা করেন। দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন। আমদানি নিষিদ্ধ আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু বিমানবন্দরে জব্দ হওয়ার পর তা বিভিন্ন কায়দায় আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করেছে দুদক। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে।

তারা হলেনÑসাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) এবিএম খালেদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামাররের বায়ার অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ রিজার্ভ) ফিরোজ আহমেদ খান ও উপপরিচালক (লিভ/রিজার্ভ ট্রেনিং অ্যান্ড রিজার্ভ পদ) এবিএম সালাহ উদ্দিন।

এজাহারে বলা হয়, সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়েই ২০২১ সালের জুলাইয়ে ১৮টি ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি করে তা ছাড়করণের চেষ্টা করেন। পরে কাস্টমস এই গরুগুলো জব্দ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জিম্মায় দেয়। গরুগুলো তিন বছর সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের তত্ত্বাবধানে পালন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ইমরান আদালতের দ্বারস্থ হলেও রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। গরুগুলো বিধি মোতাবেক প্রজনন ও মাংস উৎপাদনে ব্যবহার করার আদেশ দেন আদালত। পরবর্তীকালে তিনটি গরু মারা যায়।

চলতি বছরের মার্চে অধিদপ্তরের বাছাই কমিটি বাকি ১৫টি গরুকে প্রজনন অনুপযোগী ও কিন্তু মাংস খাওয়ার উপযোগী বলে জানায়। এরপর গরুগুলো গত রোজার মাসে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় অধিদপ্তর। কিন্তু প্রাণিসম্পদের ওই পাঁচ কর্মকর্তা নিলামে না তুলে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভে বিক্রির জন্য সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান ও জেনিথের কাছে হস্তান্তর করে।

এজাহারে বলা হয়, ‘এ-জাতীয় গরুর বেসরকারি পর্যায়ের কৃত্রিম প্রজনন দেশীয় গো-শিল্পের ও দুগ্ধশিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে তা মাংস হিসেবে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সাদিক অ্যাগ্রো গরুগুলোর সিমেন সংগ্রহ করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ব্রাহামা গরু পালন করে সরকারি নীতিমালার বরখেলাপ করে।’

দুদক বলছে, ভুয়া কাগজপত্রে ইমরান ও জেনিথ যে গরুগুলো আমদানি করেছিল, তিন বছর পর সেগুলো তাদের কাছেই পাঠানো হয়। সাদিক অ্যাগ্রো ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গরুগুলো আত্মসাৎ করেন।

গত কোরবানির ঈদের আগে সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন এক ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চেয়ে হইচই ফেলে দেন। সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত।
পরে প্রকাশ পায়, তার বাবা এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে মতিউর ও তার দুই স্ত্রী, সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান মেলে, যা তাদের আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

এ ঘটনায় মতিউর এনবিআরের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ হারান। তিনি প্রকাশ্যেও আসছেন না। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারও উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০