প্রতিনিধি, রাজশাহী: ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন রাজশাহী কোর্ট কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন শাহ। ঘটনার পর নিহতের ভাই যুবলীগ নেতা নাহিদ বাদী হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। ৮ বছরের বেশি সময় পর আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় দিয়েছে আদালত। রায়ে, ৯ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও ২২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন এ মামলার রায় ঝুলে থাকার পর গত বছরের ১১ নভেম্বর আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। মামলার রায় ১৪ বার পিছানোর পর অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) মামলার ১৫তম দিন রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারক ওএইচএম ইলিয়াস হোসেন রায় ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুসাব্বিরুল ইসলাম জানান, শাহীন শাহ হত্যা মামলায় ৯ জনের ফাঁসি ও ২২ জনের যাবজ্জীবন ছাড়াও প্রত্যেকের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যা আদায় করে নিহতের পরিবারকে দিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর মনসুর রহমান, হাসানুল জামান হিমেল, তৌফিকুল ইসলাম চাঁদ, মোহাম্মদ মহাসিন, সাইরুল, রজব, বিপ্লব, মোমিন ও আরিফুল ইসলাম।
অপরদিকে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মাহাবুল হোসেন, সাত্তার, সাজ্জাদ হোসেন, বখতিয়ার আলম রানা, হাসান আলী, মাসুদ, রাসেল, রাজা, মুতুর্জা, সুমন, আসাদুল, আক্তারুল, জইদুর রহমান, ফরমান আলী, জয়নাল আবেদীন, রাজু আহমেদ, আকবর আলী, সম্রাট হোসেন, লাল মোহাম্মদ, টিয়া আলম, আজাদ হোসেন ও মাসুম।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রসূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন নিহত শাহেন শাহর বড় ভাই রজব আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান। নির্বাচনে মুনসুর রহমান নির্বাচিত হন। নির্বাচন চলাকালে মুনসুর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। এ নিয়ে রজব আলী ও ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন। এর জের ধরে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মুনসুর ও তার সমর্থকরা রজব আলীর মালিকানাধীন রজব অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদাম ঘর ও ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এছাড়া শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সংঘ ভাঙচুর করে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। এসময় রজবসহ তার ভাইদের খুঁজে না পেয়ে হামলাকারীরা ঘোষণা দেন তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে।
এর পরদিন ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহিন শাহকে পেয়ে আসামিরা তাকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় শাহিনের মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর পিস্তলের ফাঁকা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শাহিন শাহকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে ঘটনার পরদিন ২৯ আগস্ট নিহতের ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান।
রায়ের বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী আমিদুল হক বলেন, ঘটনার তথ্য প্রমানে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলে হত্যার কোন আলামত নেই, কোন রক্তও পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় এ মামলায় সাজা হওয়া আশাব্যাঞ্জক নয়। আমরা ব্যাথিত, দু:খিত। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করবো।
রায় শোনার পর মামলার নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রায়ে আমরা খুশি। এখন সরকারের কাছে আবেদন জানানো যে দ্রুত যেন রায় কার্যকর করা হয়।