Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 3:02 pm

ছাত্র রাজনীতি: ক্ষমতার দাপট নয়, মানবিকতার চর্চা

শাহ বিলিয়া জুলফিকার: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনা থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পাশাপাশি রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রবাহিত হয়েছে। রাজনীতি, একদিকে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু এর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রায়শই শিক্ষার্থীদের জীবন অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে তরুণ প্রজন্ম তাদের মেধা ও মননকে শাণিত করে, মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করে, এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে নিজেদের প্রস্তুত করে। অথচ, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলোতে যে রাজনীতির চর্চা চলছে, তা অনেকাংশেই সেই মহতী উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ কী হওয়া উচিত? এক মহত্তর গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যেখানে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে ন্যায়, মূল্যবোধ এবং সুশাসনের ভিত্তিতে, যেখানে রাজনীতি নয়, বরং জ্ঞান ও মানবিকতা চর্চাই মূল প্রাধান্য পায়, সেটিই কি আমাদের প্রত্যাশিত আদর্শ নয়?
ইতিহাসে অনুসন্ধানী পাঠকমাত্রেই জানেন, বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশে ছাত্র রাজনীতির উন্মেষ ঘটে ইংরেজ শাসনের হাত ধরে। ইংরেজ শাসনের আগে দীর্ঘ মুসলিম শাসনামলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা থাকলেও ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন হয়নি। এর বেসিক কারণ হচ্ছে উচ্চশিক্ষা তখন কোনো বৈষয়িক লাভজনক কাজ ছিল না। শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন ও মানবসেবাই ছিল মূল লক্ষ্য।

তাই উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্র খুব অ্যাভেইলেবল ছিল না। অর্থনীতিও ছিল কৃষি এবং ব্যবসাভিত্তিক। আর এই দুই কাজের জন্যই উচ্চশিক্ষা প্রয়োজনীয় ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষা শেষেই সাধারণত ছাত্ররা নিজ নিজ কর্মে আত্মনিয়োগ করতো। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে উচ্চশিক্ষা তার নৈতিক ভিত্তি থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, যখন ইংরেজরা তা কেবল লাভজনক পন্থা ও অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। শিক্ষাকে তখন আর জ্ঞানার্জনের পবিত্র উদ্দেশ্য বা মানবতার সেবার মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় না। বরং সামাজিক সম্মান, সরকারি চাকরি, ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা, ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠার হাতছানি এবং জমিদারি অধিকারসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা অর্জনের শর্তে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করা হয়।এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমে তার আদর্শিক লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে। শিক্ষকরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে শিক্ষাদান শুরু করেন এবং শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাগ্রহণকে কেবল বৈষয়িক সুবিধার অর্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক কৃত্রিম এবং বৈষয়িক রূপ ধারণ করে, যার পরিণতিতে তাদের মধ্যে অমিল ও সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। এই বৈষম্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকেই ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং ছাত্ররাজনীতির জন্ম হয়, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলতে থাকে।

অন্যদিকে উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গঠিত হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, বিশেষত যখন রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে জনমত তৈরি করতে শুরু করে। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ছিল উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের নেতৃত্বে এবং দাদাভাই নওরোজি, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অন্য নেতাদের দ্বারা গঠিত এই দলটি প্রথমে ভারতীয় এলিট শ্রেণির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করলেও সময়ের সঙ্গে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের প্রাধান্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৬ সালে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর আহ্বানে মুসলিম রাজনৈতিক নেতারা ঢাকায় একত্র হয়ে মুসলিম লীগের গোড়াপত্তন করেন। এটি মূলত কংগ্রেসের বৈরী মনোভাব ও মুসলিমদের প্রতি অসহনশীলতার ফলস্বরূপ গঠিত হয়। কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ উভয়েই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিলেও, ধর্মীয় বিভাজনের কারণে দুই দল ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক লক্ষ্যে অগ্রসর হয়।

১৯৩২ সালে মুসলিম লীগ ছাত্রদের রাজনীতিতে সংযুক্ত করার প্রয়াস চালায়। কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নির্দেশনায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ‘অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লিগ’ গঠিত হয়। এই সংগঠনটি উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত। মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই সংগঠন তাদের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সুযোগ করে দেয়। ‘অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লিগ’-এর সফলতার ফলে মুসলিম লীগ সারা উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। দ্রুতই মুসলিম ছাত্ররা জাতীয় রাজনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময় কংগ্রেসের সমর্থনে ১৯৩৬ সালে হিন্দু ছাত্রদের নিয়ে ‘স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়। এভাবেই ছাত্র রাজনীতি উপমহাদেশে লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

ছাত্র রাজনীতি ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথমদিকে এটি স্বাধীনতা আন্দোলনের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করলেও, পরবর্তীকালে এটি দলীয় রাজনীতির অংশ হয়ে যায়। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির বৈধতা ও গুরুত্বের প্রশ্নে ইতিহাস বলে, উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি তরুণদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক চর্চা আমাদের দেশের ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), শিক্ষা আন্দোলন (১৯৬২), গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯), মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১), স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন (১৯৯০), কোটা সংস্কার আন্দোলন (২০১৮), নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (২০১৮) ও সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (২০২৪)-সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এই আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, রাজনীতি ছাড়া শিক্ষাজীবন অসম্পূর্ণ। তবে রাজনীতির গুণগত মানই নির্ধারণ করবে এটি সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিবে নাকি দুর্নীতি, সহিংসতা এবং ভেদাভেদকে উসকে দেবে।

স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি যেন শিক্ষার পরিবেশকে গ্রাস করে নিচ্ছে। শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক দলের প্রভাব এতই প্রবল যে, এর সদস্যরা স্বতন্ত্র চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পাচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্ররা দলে যোগ দেয় কোনো আদর্শ থেকে নয়, বরং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার আকাঙ্ক্ষা থেকে। এতে তারা নিজেদের নৈতিক অবস্থানকে বিকিয়ে দেয়। এভাবে তরুণদের মধ্যে যে আদর্শিক দীক্ষা আসার কথা ছিল, তা রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি যেমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে, তেমনি তা সহিংসতাকে উসকে দিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করছে। এ যেন শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠছে ক্ষমতার লড়াইয়ের ময়দান। তবে উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, এমন ধারণা ভুল। বরং এর সঠিক চর্চা একটি সুস্থ, সচেতন এবং জ্ঞানমুখী সমাজ গঠনে সহায়ক হতে পারে। ছাত্ররা রাজনীতির মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাদের শেখার সুযোগ থাকে, কীভাবে সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা যায়। তারা নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে। তবে এ জন্য রাজনীতি হতে হবে আদর্শনির্ভর এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

যেহেতু ছাত্ররা একটি জাতির ভবিষ্যৎ, তাই তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব যেমন শিক্ষার, তেমনই রাজনৈতিক চেতনার মাধ্যমেও তাদের আদর্শবান ও নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। ক্যাম্পাসে রাজনীতি কেবল ক্ষমতাকেন্দ্রিক বা বহিরাগত রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে উঠলে তা জাতির অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিভাবে আদর্শনির্ভর, সহিষ্ণুতাপূর্ণ, এবং বহিরাগত প্রভাবমুক্ত একটি ছাত্র রাজনীতি কিভাবে দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে, সেই ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। প্রথমত, আদর্শনির্ভর রাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্র রাজনীতির প্রধান ভিত্তি। রাজনীতি কখনোই স্বার্থপরতা বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য হওয়া উচিত নয়। ছাত্ররা রাজনীতির মাধ্যমে জাতির কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করবে, মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করবে। তাদের প্রতিটি চিন্তা ও কাজের ভিত্তি হবে সেবাধর্মিতা, আত্মশুদ্ধি। উচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি ছাত্র সংগঠনকে আদর্শবাদী চিন্তা ও নৈতিকতার মাপকাঠিতে এগিয়ে আসতে হবে। যে আদর্শে দেশ ও সমাজের উন্নতি নিহিত, সেই আদর্শই হবে তাদের প্রেরণা। দ্বিতীয়ত, সহিষ্ণুতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা ছাত্র রাজনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকবেই, কিন্তু সেটি কখনো সহিংসতায় রূপ নেবে না। বরং যুক্তি, বিতর্ক ও মুক্ত চিন্তায় প্রতিটি ছাত্র সংগঠনকে হতে হবে সমৃদ্ধ। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করার মধ্য দিয়ে নিজেদের মতাদর্শকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

যুক্তির ভিত্তিতে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ছাত্ররা নিজেদের চিন্তাধারা প্রসারিত করবে এবং যুক্তির ওপর ভিত্তি করেই রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি স্থাপন করবে। তৃতীয়ত, শিক্ষার পরিবেশ সংরক্ষণ হলো ছাত্র রাজনীতির অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, বরং শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করবে। শিক্ষাঙ্গন কোনো সহিংসতার জায়গা নয়, এটি হবে মুক্ত চিন্তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ কোনোভাবেই বিঘ্নিত হবে না। ছাত্রদের মনে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে, যাতে তারা নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে। চতুর্থত, বহিরাগত প্রভাবমুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র রাজনীতি কেবল শিক্ষার্থীদের নৈতিক স্বার্থে পরিচালিত হতে হবে, কোনো বহিরাগত রাজনৈতিক দল বা শক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে। বহিরাগত প্রভাব থাকলে ছাত্ররা নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারায় এবং রাজনীতি হয়ে ওঠে নিষ্প্রাণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্যুত। রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের মেধা ও চিন্তার বিকাশের স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পঞ্চমত, সামাজিক দায়িত্ববোধ শিক্ষা ও রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মননে প্রোথিত হওয়া অপরিহার্য। ছাত্র রাজনীতি হবে সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন— অসাম্য, দুর্নীতি, শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে ছাত্রদের সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং তাদেরকে সমাজের উন্নয়ন ও প্রগতির লক্ষ্যে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি হবে জাতির উন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতেও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

অতএব, ছাত্র রাজনীতি হতে হবে আদর্শনির্ভর, সহিষ্ণু, বহিরাগত প্রভাবমুক্ত এবং শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার একটি মাধ্যম। আর এটির জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার আদায় ও রাজনীতি চর্চার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ‘ছাত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠা। লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম কিম্বা আইডোলজি প্রচার করতে পারে; কিন্তু রাজনীতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত ‘ছাত্র সংসদ’। যেখানে দলমত ঊর্ধ্বে একটি গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহণমূলক একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। যদি শিক্ষার্থীরা এই মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে, তাহলে তারা জাতির কল্যাণে নিজেদের শক্তি ও মেধা উৎসর্গ করতে সক্ষম হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনীতি আমরা চাই, তা হবে শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন এবং মানবিকতাকে জাগ্রত করার একটি মাধ্যম। আমরা চাই, রাজনীতির নামে ক্ষমতার দাপট নয়, বরং যুক্তি, মানবিকতা এবং নৈতিকতার চর্চা।