ছাত্র রাজনীতি থেকে রণাঙ্গনের কমান্ডার সামসুল মাষ্টার

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): সামসুল আলম মাষ্টার রণাঙ্গনের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।  জ্ঞানতাপস এই যোদ্ধা চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। মুক্তচিন্তায় তিনি সাহিত্য চর্চা করেন। একাধারে তিনি একজন লেখক ও সাহিত্যক। ক্ষণজন্মা এই বীর পুরুষ রাজনীতি থেকে হয়ে ওঠেন রণাঙ্গনের যুদ্ধকালীন কমান্ডার। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১০ নং হাইলধর ইউনিয়নের মালঘর গ্রামে এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সামশুল। ছোট বেলা থেকে তিনি ছিলেন এক সৃজনশীল প্রতিভা।

স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে এই বীর যোদ্ধার কাছে তার জীবনের গল্প শুনেছেন শেয়ার বিজের চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রতিনিধি এনামুল হক নাবিদ।

শেয়ার বিজকে সামসুল আলম বলেন, ‘মালঘর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর শিক্ষা জীবন শুরু করে পরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করি আমি। পরে উপজেলার নিত্যানন্দ স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অধ্যায়ন শুরু করি। ছাত্রজীবনে আমি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করি। পরে সেখানে মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এর মাধ্যমেই শুরু হয়  আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পথচলা। এসময় রাজনীতির পাশাপাশি তার সাহিত্য চর্চায় পুরোদমে শুরু করি। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কলেজ দিবা বিভাগের ম্যাগাজিনের সম্পাদকও ছিলাম আমি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৬৫ সালে বিএ পাশ করি।  এরপর শুরু হয় আমার কর্মজীবন। নিত্যানন্দ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করি। এসময় মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ সংগঠনে যুক্ত হয়ে পড়ি। দীর্ঘ ৫বছর শিক্ষকতার সময়ে স্বাধিকার আন্দোলনে নানা ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ি।’

সামসুল আলম বলেন, ’৭১ এ মহান যুদ্ধ শুরু হলে আমি এই অঞ্চলে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করি। আনোয়ারায় সর্ব প্রথম আমি ছাত্র, যুবক, গ্রামের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করি। যুদ্ধকালীন সময়ে খাসখামা, খাসমহল নিত্যানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় গুজরা সংলগ্ন উত্তর পাশে প্রথম অপারেশনের নেতৃত্ব দেই। পরবর্তী সময়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক আদর্শের কারণে খন্দকার মোস্তাক সরকারের আমলে ১ বছর কারাবরণও করি।’

নিত্যানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের পর মেরিন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে যথাক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সামসুল আলম। এছাড়াও তিনি রাউজানের নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও মুসলিম হাই স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি ছয় সন্তানের গর্বিত পিতা। বর্তমান সময়ে তিনি সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত আছেন।  তার একটি মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক বই ‘মুক্তিযুদ্ধে আনোয়ারা’ ও ‘মোল্লার তেতুল তত্ব’ নামে আরেকটি বই প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তার আশা ও আখাঙ্কার কথা জানতে চাইলে শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘আমরা যে চিন্তা ও চেতনা নিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি সেটি এখনো প্রতিফলন হয়নি। স্বাধীনতা শক্তি ঐক্যের বিভক্তির নয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। স্বাধীনতা সুফলের মাধ্যমে দেশ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাক, সেটিই কামনা করি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০